সর্বশেষ

10/সর্বশেষ/ticker-posts

কিডন্যাপ

মৃধা আলাউদ্দিন


সেটা ছিল আষাঢ় মাস। চারদিকে থই থই পানি। বৃষ্টি, বন্যা সাথে পাহাড়ি ঢল। ভারত থেকে নেমে আসা এই পাহাড়ি ঢল এবং অতিবৃষ্টির কারণে সমগ্র সিলেটের নদনদী ও হাওর-বাঁওড়ের পানি বেড়ে সমগ্র সিলেটে বিশেষ করে দোয়ারাবাজার-সুনামগঞ্জ উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিচু জায়গা পানিতে তলিয়ে গেছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গজারিয়া রাবারড্যাম এলাকার দুটি সড়ক একেবারেই ভেঙে গেছে। গজারিয়া খেয়া ঘাটের পাশেই সুখদেবপুর গ্রাম। এ গ্রামেই মোমিন মোড়লের বাড়ি। মোমিন মোড়লের মেঝো ছেলে সোহাইম মোড়ল লি। সে কলেজ শেষ করে শহরে গিয়ে জিম ও ক্যারাতে ভর্তি হয়। সে আরো পাঁচ বছর আগের কথা। এখন সে ব্লাকবেল্টপ্রাপ্ত একজন কুংফু ওস্তাদ।

২.

যেদিন গ্রামে পানি ওঠে সেদিন লির বড় ভাইয়ের বউ রাহেলা বেগম ছাড়া বাড়িতে আর কেউ ছিল না। রাহেলার বারো বছরের ছেলে জুবায়ের সেও বাড়িতে ছিল না। বন্ধুদের সাথে পানি দেখতে সেই সকালে বের হয়েছে। এখনো ফেরেনি। বড়ো ভাই ও আসিফ নূর মোড়ল সিলেট শহরে থাকেন। বাবা ছেলেদের কাছে বেড়াতে গেছেন। মা গেছেন বোন হনুফা বানুর কাছে, পাশের গ্রামেÑ কী একটা জরুরি কাজে। 


যাচ্ছে মরে মানুষ-গরু

এই দুনিয়ার সব ছাড়ি

বানের জলে যাচ্ছে ভেসে

নাড়াপালাÑ ঘরবাড়ি।


আমরা যারা গরিব মানুষ

কিষান-মজুর হায়,

আমাদের এই সবাইকে আজ

উঠাও তোমার নায়।


আজকে বাঁচাও সবাইরে আজ

বাঁচাও তাড়াতাড়ি


যাচ্ছে ভেসে বানের জলে

আলু-পটোলÑ তরকারি

পায় না কেনো মানুষ-পশু

ত্রাণ-তহবিল সরকারি?

(উপরের গানটা একটা ব্যথার সুরে ভাসতে থাকবে। আর সেলুলয়েটের ফিতায় সমগ্র সিলেটের বন্যার চিত্র বারবার ভেসে উঠবে।) 


৩.

সিলেট শহরের এক কুখ্যাত গড ফাদারের নাম কানা লিটন। সারা শহরে চাউড় আছেÑ প্রায় দুই যুগ আগে সিলেটের বন্দর বাজারের কোনো এক গ্রামে ডাকাতি করতে গেলে গ্রামবাসী ধরে তাকে মারার পর এক চোখ কাটা চামচ দিয়ে উঠিয়ে দেয় এবং সেই থেকে সে কানা লিটন। এই কানা লিটনের শহরে এখন বাড়ি-গাড়ির অভাব নেই। ঢাকা শহরেও তার বাড়ি ও ব্যবসা ছড়িয়ে আছে। তার ব্যবসা ছড়িয়ে আছে দেশের বাইরে ভারত-দুবাইতেও। তার ছেলেমেয়েরা ইউরোপ-আমেরিকায় পড়াশোনা করে। 

কানা লিটন যখন শুনলো চারদিকে পানি বাড়ছে। তখন সে দ্রুত বন্যাকবলিত এলাকায় লোক পাঠিয়ে দিলো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে ছোটো ছোটো ছেলে এবং উঠতি বয়সের মেয়েদের কিডন্যাপ করতে। জুবায়ের যখন বাড়ি ফেরার জন্য ব্যাকুল হলো, তখন সে দ্যাখে তার পাশে বন্ধুরা কেউ নেই। কে কখন চলে গেছে খেলা ও মাছ ধরার নেশায় জুবায়ের তা টেরই পায়নি। এখন সে একটা উঁচু ভিটেবাড়িতে দাঁড়িয়ে কান্না করছে। ঠিক এমন সময় তার সামনে কানা লিটনের লোক গনেশ ও রুস্তম সাদা রংয়ের একটা স্পিড বোড নিয়ে হাজির। কি হয়েছে বাবা? তুমি কান্না করছো কেনো? ওই তো, ওই দিকেÑ ডান হাত উঁচু করে বললো, ওই পশ্চিমপাড়ায় আমাদের বাড়ি। কিন্তু পানির জন্য আমি বাড়ি যেতে পারছি না। 

কোনো ভয় নেই, মুখে একরাশ হাসি নিয়ে বললো গনেশ, চলো আমরা তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবো। 

সত্যি? হাসিতে ছলছল করছে জুবায়েরে চোখ-মুখÑ সমস্ত শরীর। আমাকে তোমরা বাড়ি পৌঁছে দেবে?

হুম। এসো বাবা।Ñ গনেশ ও রুস্তমের ব্যস্ততার অন্ত নেই।

প্রায় এক লাফে জুবায়ের উঠে এলো বোডে। গনেশের পাশে বসলো এবং গনেশ তার পকেট থেকে একটি রুমাল বের করে জুবায়েরের নাকের সামনে ধরলো। আর অমনি জুবায়ের ঘুমিয়ে পড়লো। বন্যার অথৈ জলে ভেসে চললো কানা লিটনের স্পিড বোড।

৪.

জুবায়েরের যখন ঘুম ভাঙলো তখন দ্যাখে একটা অন্ধকার ঘরের ফ্লোরে সে পড়ে আছে। ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে। ঘরে যেটুকু আলো আছে তা দিয়ে সে দরোজার কাছে গেলো। ডাকলো, বাইরে কে আছেন? দরোজা খুলুন। আমি বের হবো। আমি মায়ের কাছে যাবো। ... দরোজা খুলুন। আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে। আমাকে আমার মায়ের কাছে যেতে দিন। কাকু, তোমরা কোথায়? কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে কয়েকবার মা মা করে ডেকে আবার ঘুমিয়ে পড়লো জুবায়ের। ৫.

ঘুম যখন ভাঙলো তখন সে দ্যাখে তার সামনে একটা জগ-মগ ও একটা প্লেটে কিছু ভাত-তরকারি। জুবায়ের কিছু না ভেবে খেতে বসলো এবং খুব দ্রুত সে সব ভাত খেয়ে ফেললো। খাবার পর জুবায়ের আবার মা মা বলে ডাকতে থাকলো। কিন্তু কেউ এলো না। হঠাৎ মনে হলো যে কাকুরা তাকে বাড়ি পৌঁছে দেবে বলেছিলো তাদের ডাকি। কাকু কাকু বলে কয়েকবার ডাকার পরই কেউ একজন দরোজা খুলে দিলো। জুবায়ের বললো, ওই কাকুরা কই? যারা আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিবে বলেছিলো?

তারা আছে। বললো লোকটি, চলো আমার সাথে। 

জুবায়ের লোকটির সাথে হাঁটতে লাগলো। তারা একটি জমকালো কাচের সুন্দর রুমে ঢুকলো। সে দেখলো, একটি আলিশান চেয়ারে বসে আছে প াশ পার হওয়া একটি লোক। সে জুবায়েরকে বললো, তোমার কি বাড়ির কারো মোবাইল নাম্বার মনে আছে?

হুম, আমার কাকুর নাম্বার আমার মুখস্ত। 

কানা লিটন বললো, এই নাও ফোন, তোমার কাকুকে ফোন দাও।

৬.

একটা আননুন নাম্বার থেকে ফোন পেয়ে লি দ্রুত ফোনটি রিসিভ করে বললো, হ্যালো কে?

কাকু, প্রায় কান্না মেশানো কণ্ঠে বললো জুবায়ের, কাকু, আমি। জুবায়ের আরো কিছু বলতে গিয়েও পারলো না। কানা লিটন মোবাইলটি চিলের মতো ছোঁ মেরে নিয়ে গেলো এবং খুব মোলায়েম কণ্ঠে বললো, কে বাবা তুমি?

লি খুব ব্যস্ততার সাথে বললো আমি জুবায়েরের কাকু। আমরা গাড়িতে। বাড়ির দিকে যাচ্ছি। একদিকে বন্যা। পাহাড়ি ঢল। আরেকদিকে আমরা জুবায়েরকে পাচ্ছি না।...

জুবায়েরকে নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। ও আমাদের কাছে আছে। ভালো আছে। ওকে পেতে হলে এক সপ্তাহের মধ্যে কিন ব্রিজের পূর্ব পাশে একটা পোড়ো বাড়িতে তুমি একা চলে আসবে। সাথে প াশ লাখ টাকা। কোনো চালাকি করলে, ব্যাব-পুলিশকে বললেÑ জুবায়েরের লাশ পাবে। ‘লাশ’ শব্দটা শুনে জুবায়ের হাউমাউ করে চিৎকার করতে লাগলো। জুবারের কান্না শুনে লিও কেঁদে দিলো। ফোন নিলো লির বড়ো ভাই মোসলেম মোড়ল। হ্যালো, কে? আপনারা কে? 

তোমাদের জুবায়ের এখন আমাদের কাছে। শোনো জুবায়েরের কণ্ঠ।Ñ কানা লিটন ফোনটা জুবায়েরের কাছে দিয়ে তাকে একটা জোরে লাথি মারলো। বললো, বল, তিন দিনের মধ্যে প াশ লাখ টাকা নিয়ে এসে তোকে নিয়ে যেতে।

জুবায়ের শুধু কাকু কাকু বললোÑ এ পর্যন্তই। এরপর তার কাছ থেকে ফোন নিয়ে কেটে দিলো কানা লিটন।

ওপার থেকে আবার ফোন এলো। এবার কানা লিটন বেশ কর্কশ কণ্ঠে বললো, যা বলেছি তাই কর। প াশ লাখ টাকা নিয়ে সময়মতো নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে যাবি।

৭.

এদিকে লি তার বড়ো ভাই ও বাবাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো। বললো, আপনারা বাড়ি যানÑ এদিকটা আমি একাই সামাল দেবো ইনশাআল্লাহ। 

লির বাবা ও বড়ো ভাইয়ের সিলেট শহর গ্রামের রাস্তা ধরেছে। তারা বাপ-বেটা বাড়ি পর্যন্ত আর যেতে পারলো না। কোনো রকমে গজারিয়া খেয়া ঘাটে এলো। খেয়া ঘাটে ছোটো বড়ো বেশ কয়েকটা জাহাজ বাঁধা। সবগুলো জাহাজেই মানুষ গিজগিজ করছে। সবাই আহাজারি করছে। বড়ো রাস্তা, স্কুল ঘর, মসজিদ-মন্দির ও এতিমখানায়Ñ সবখানেই মানুষ আর মানুষ। কারো মুখে হাসি নেই। শুধু মলিন, কান্না আর বৃষ্টিভেজা অনাহারি মুখ। এখানকার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে আছে মানুষের কান্নায়। মোমিন মোড়ল ও তার বড়ো ছেলে পরিচিত যাকেই পাচ্ছে, তার কাছেই জানতে চাচ্ছে, আমাদের বাড়ির বউ-বেটিরা কোথায়? তোমরা কি কেউ তাদের দ্যাখেছো? এভাবে প্রায় এক ঘণ্টা খোঁজার পর কেউ একজন বললো, তোমার বেটার বউ ওই প্রাইমারি স্কুলে আছে। সে তার ছেলে ও শাশুড়িকে না পেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।

৮.

লি কানা লিটনের নামের সাথে বেশ ভালোভাবেই পরিচিত। তার গুণ্ডাপাণ্ডাদের কাউকে কাউকে চেনে বলে মনে হচ্ছে এখন। সে প্রথমেই গেলো তার কুংফু-ক্যারাতের ওস্তাদÑ যুগান্তর চাকমা চাইনিজের কাছে। তাকে সব খুলে বললো। মুহূর্তেই ওস্তাদ চাইনিজ শহরের ক্যারাতে ওস্তাদ ও সাগরেদদের এক জায়গায় করে ফেললো। নিজেরা মাত্র দশ মিনিটের একটা বৈঠক করলো। শহরটাকে চার ভাগ করে চারদিকে চলে গেলো দশ দশজন করে ক্যারাতে ব্লাকবেল্ট। যারাই কানা লিটনের লোকদের পেলো, তারাই তাদের চেইন স্টিক দিয়ে মেরে কেটে একাকার করে ফেললো এবং তাদের সবাইকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিলো। তারা যুগান্তর চাকমা চাইনিজের জিমের একটা ঘরে এনে আবার তাদের নান চাকু দিয়ে কিছু উত্তম-মধ্যম দিতেই তারা কেউ কেউ বললো, সত্যিই বস, আমরা আসলেই জানি না; কোথায় আছে আপনাদের ছেলে। এদের মধ্যে একজন বললোÑ আমি জানি কোথায় আছে জুবায়ের; আপনার ভাতিজা।

বল, কোথায় আছে আমার জুবায়ের। আমার কলিজা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললো লি, বল, হারামখোরের বাচ্চারাÑ কোথায় আছে আমার জুবায়ের।

হাত ভাঙা ঠাণ্ডা গড়াই বললো, ওস্তাদ, আপনার ভাতিজা একেবারে কানা লিটন বসের খাস কামরায় আছে। তার হেফাজতেই থাকে সমস্ত কিডন্যাপকৃত ছেলেমেয়ে ও উঠতি বয়সের নারীরা। যাদের আমরা দুবাই ও ভারতে পাচার করি।

এখন বল, আমার ভাতিজাকে কীভাবে জীবিত উদ্ধার করবো? হুঙ্কার দিয়ে উঠলো লি।

ওস্তাদ আলিজান খুবই বয়স্কÑ যুগান্তর চাকমা চাইনিজেরও ওস্তাত তিনি। আলিজান বললেন, আমাদের মরবে একজন। আর তোরা মরবি সব।

না বস, এটা আমরা করবো না। আমি গনেশকে দেখেছি একটা বারো বছরের ছেলেকে ধরে এনে বসের কাচের চেম্বারে পৌঁছে দিয়েছে। আমরা আপনাদের ছেলেকে ফিরিয়ে দেবো। আপনারা আমাদের ছেড়ে দিন।

ডান পা দিয়ে হাত ভাঙা ঠাণ্ডা গড়াইয়ের থুঁতনির মধ্যে এমন এক সাইড কিক মারলো লিÑ যে তার মাড়ি ফেটে রক্ত বের হয়ে গেলো।... তোমাদের ছেড়ে দেবো? জানোয়ারকা বাচ্চা, আগে বল, দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বললো লিÑ আমার জুবায়ের এখন কেমন আছে? কোথায় আছে?

মাজার রোড। আম্বরখানার পাশে। বসের কাচের চেম্বারে। খাসকামরায়।

তোরা শুধু এটুকু বল, দু’হাত দিয়ে দুজন গুণ্ডামার্কা লোকের চুল ধরে উঁচু করে ফেললো লি। আমরা সেখানে কীভাবে পৌঁছবো? লি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো।

আপনাদের কিছুই করতে হবে না। বললো, হাত ভাঙা ঠাণ্ডা গড়াই। আমিই বসকে ফোন দিচ্ছি।

৯.

কালা লিটনের হঙ্কারে কেঁপে উঠলো কাচের জমকালো চেম্বার। সরে গেলো কয়েকজন বারোবনিতা। দুজন স্মার্ট আর সুদশর্ন গিগ্যালো। চোখের দামি চশমাটা মাটিতে ফেলে দিয়ে পায়ের কালো গাম বুট দিয়ে দুমরেমুচরে ফেললো। পাশে থাকা দুই সহচরকে সজোড়ে লাথি মেরে সরিয়ে দিলো। না, এখন পর্যন্ত আমার মুখের খাবার কেউ কেড়ে নিতে পারেনি বললো কানা লিটন। এটাও পারবে না। বলেই জুবায়েরকে এক হাত দিয়ে উঁচু করে মাথায় তুললো। আর অমনি দৌড়ে ছুটে এলো কানা লিটনের বড়ো ছেলেÑ না, বাবা, সব সময় জিততে হয় না। আমরা ভুল করে ফেলেছি। জুবায়েরের সবাই ক্যারাতে ব্লাকবেল্টপ্রাপ্ত। জুবায়েরের কোনো ক্ষতি হলে, ওরা আমাদের ছাড়বে না। খুব ঠাণ্ডা মাথায় বললো রনি পাণ্ডেÑ এরা ক্ষেপে গেলে আমাদের সব ব্যবসা গুটিয়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে হবে।

না, আমার চোখ যাওয়ার পর থেকেÑ নিজের চুল নিজেই ছিঁড়তে ছিঁড়তে বললো কানা লিটন, আমি আর কখনো হারিনি। আমি হারতে জানি না। একটু নরম সুরে বললো, গতকালই শেষ হলো নামে-বেনামে ঢাকা-সিলেট থেকে আমার নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এক হাজার কোটি টাকার লোন নেয়া। এ আমি কি দিয়ে শোধ করবো? ঢিল মেরে ছুড়ে ফেললো জুবায়েরকে। সার্কাসের বলের মতো জুবায়েরকে ক্যাচ ধরে ফেললো কানা লিটনের ছেটো ছেলে খড়ু পাণ্ডে।

১০.

হাত ভাঙা ঠাণ্ডা গড়াইয়ের কথা মতো কানা লিটনের দুই ছেলে রনি পাণ্ডে ও খড়ু পাণ্ডে জুবায়েরকে নিয়ে কিন ব্রিজের মাঝে দাঁড়ালো এই ভেবেÑ যদি তাদের মরতে হয় তো মরবে জুবায়েরও। তাকে ফেলে দিবে সুরমা নদীতে। রাখে আল্লাহ মারে কে? লি রিকশাচালকের বেশ ধরে এসে ছিনিয়ে নিলো জুবায়েরকে। জুবায়েরকে ছিনিয়ে নেয়ার ঠিক পর মুহূর্তে ব্রিজের দুই ধার থেকে দলে দলে ব্লাকবেল্টপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন এসে ধরে ফেললো কানা লিটনের ছেলেদের। এখানে এলো আরেকজন বিশেষ ব্লাকবেল্টপ্রাপ্ত সালমা সুর। যে লিকে ভালোবাসে। লির সুখে-দুঃখে সে সবসময় পাশে থাকে। এখনো আছে। থাকবে। 

জুবায়েরকে নিরাপদে রেখে লি ফিরে এসে একাই দুজনের বুকে লাথি ও চেইন স্টিক দিয়ে মেরে তারে বুকের পাজর ভেঙে দিলো। তাদের মুখ দিয়ে গড়গড় করে রক্ত বের হয়ে এলো। তাদের মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তে তাদের দিয়ে কানা লিটনকে কিন ব্রিজে আসতে বললো। দশ মিনিটের মধ্যে কানা লিটন হাজির হলো কিন ব্রিজে। তার সুরক্ষায় আকাশে দুটো হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছিলো। কিন্তু না, র‌্যাব-পুলিশ তাকে ধরে ফেলার আগেই অজানা স্থান থেকে শুধু একটা গুলি এসে তার বুক ভেদ করে চলে গেলো এবং সে মুহূতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। সিলেটের বিখ্যাত কিন ব্রিজে সমাপ্ত হলো একটি ঘৃণিত জীবনের অবসান হলো। কথিত আছে, এই কানা লিটনের বাবা ও দাদা দুজনেই রাজাকার ও আল সামসের সক্রিয় সদস্য ছিল। ঢাকা মিরপুরের বদ্ধভূমিতে তারা অসংখ্য লাশ ফেলেছেÑ যা এক সময় শেয়াল-শকুনের খাদ্য হয়েছে। 

১১.

আস্তে আস্তে নেমে গেলো পাহাড়ি ঢল ও বন্যার পানি। শান্তির সুতাসে ভরে গেলো দেশ। লি ফোনে বাবাকে পেলো না। বড়ো ভাইকে ফোন দিয়ে জুবায়েরকে ফিরে পাওয়ার সব কথা জানালো। আর তাদের কথা জানতে চাইলে বড়ো ভাই আসিফ নূর মোড়ল কান্না করতে করতে বললো, মাকে এখনো পাইনি। তোর ভাবি অজ্ঞান হয়ে স্কুলের বারান্দায় পড়ে আছে। আমরা এখন প্রাইমারি স্কুলে আছি। খাওয়া নেই। পানি নেই। বাবার বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ম্লান কণ্ঠে বললো আসিফ নূর, এখানে মানুষের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে আছে। তুই তাড়াতাড়ি ফিরে আয় ভাই। 

আমরা আসছি বড়ো ভাই, স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো লিÑ মাকে খুঁজে বের করুন। আমরা আসছি।

যতো বাধা আর বেড়াজাল

আসুক দুনিয়ায়

আছি এবং থাকবো দুজন

সবুজ সীমানায়।


প্রেম-পিরিতি আর দুজনের 

ভালোবাসা দিয়ে

আজকে যাবো দুনিয়াটা 

অনেক দূরে নিয়ে।


চলো যাই ঘুরে আসি

ওই দূর নীলিমায়...


অন্ধকার সব ধুয়ে নেবো

পাহারের ঝরনায়

দেখবো স্বপন দুজন মিলে

মাটির বিছানায়।

(জুবায়ের, সালাম সুর ও লি যখন বাড়ি ফিরতে থাকবে তখন ইথারে ভাসবে এই গানটা। কখনো দেখানো যাবে লি ও সালমা সুর নদীর ধারে, পাহাড়ে হাঁটবে। দৌড়াবে। নেচে নেচ এই গানটা গাইতে থাকবে।) 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ