সর্বশেষ

10/সর্বশেষ/ticker-posts

কোন সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে: নবম পর্ব


ড. গৌতম সরকার

দিন দিন শরতের নীল আকাশ আরও ঘন হয়ে উঠতে লাগল। সাদা মেঘের পালে যেন শিউলি ফুলের রং লেগেছে। হাজার হাজার মাইল দূরে ঢাকে কাঠি পড়েছে, মণ্ডপ জুড়ে মা মহামায়া সন্তানসন্ততি নিয়ে বিরাজ করছে, যদিও তার কোনো রেশ এই অবিরাম ছুটে চলা ট্রেনের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে না। শুধু মনের আকাশে সেই দৃশ্যের নিত্য আনাগোনা, কানের মধ্যে সেই শব্দের নিরন্তর বেজে ওঠা। ভাবছিলাম সুদুরের শরৎ এবং শারদীয়া শুধু আমাকেই এমন উন্মুখ করে তুলছে; কিন্তু ভুল ভাঙল। সেদিনই বিকেলে প্রায় দশ-বারোটি ছেলেমেয়ে, বয়স যাদের কুড়ি-পঁচিশের মধ্যে, আমার কাছে দরবার করতে এল। দেখলাম তার মধ্যে আকাশ আর তার পাঠশালার সঙ্গী মেয়েটিও আছে। তাদের বক্তব্য, যদিও তারা জানে না দুর্গাপুজো কবে, আবার এটা জানে ট্রেনে পূজো করা সম্ভব নয়, তবে তারা নিজেদের মত করে শরৎকালকে বরণ করে নিতে চায়। সেই বরণ অনুষ্ঠানে যে-যার মতো গান, নাচ, কবিতা আবৃত্তি আর সম্ভব হলে নাটক করতে পারে। এখন আমার কাছে পারমিশন চাইতে এসেছে। আমি তো ওদের প্রস্তাব শুনে অবাক, বললাম, “খুব ভালো প্রস্তাব নিয়ে এসেছো। তোমাদের এই উদ্যোগে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াবে না, তবে আমি তো একা নই, আরও অনেকের সাথে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু আমার কটা প্রশ্ন আছে”।

সবাই মিলে হৈ হৈ করে উঠল, “বলুন..বলুন?”

“এই অনুষ্ঠানের তো একটা প্রস্তুতি আছে, বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন... সেগুলো জোগাড় হবে কি করে! আর কুড়িটা কামরার লোকেদের নিয়ে এরকম একটা অনুষ্ঠান কিভাবে সম্ভব?” এবার দলের দুটি মেয়ে এগিয়ে এল। তার মধ্যে লম্বা ফর্সা মেয়েটি বলল, “আপনাদের পারমিশন পেলে আমরা ব্যাপারটা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করব। বাইরে থেকে যখন কিছু পাওয়া সম্ভব নয়, তখন আমাদের কাছে যা আছে তাই নিয়েই গোটা পরিকল্পনাটা করতে হবে। আর কুড়িটা কামরার ব্যাপারটা আমরা ভেবেছি। এই ট্রেনে বহু গুণী মানুষ আছেন, আর উৎসাহী মানুষ আছেন তার থেকে অনেক গুণ বেশি। আমরা দুটো দুটো কামরা নিয়ে একসাথে দশটা জায়গায় অনুষ্ঠান করবো। ব্যাপারটা এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে দুটো কামরা জুড়ে পুরো পারফরম্যান্স হয়। তাতে কাউকেই জায়গা ছেড়ে উঠতে হবে না”। 

আমি মেয়েটিকে বাধা দিয়ে বলি, “কিন্তু এই বিশাল ব্যবস্থা করবে কি করে? একসাথে দশটা প্রোগ্রাম, এটা কি সম্ভব?” এবার একটি ছেলে কথা বলল, “স্যার, আমাদের মত অনেকে এই ট্রেনে আছেন যাঁরা বাচ্চাদের এমনকি বড়দেরও শিখিয়ে-পড়িয়ে নিতে আগ্রহী। আমরা কেউই প্রফেশনাল নই, আর এটা কোনো প্রতিযোগিতাও নয়। স্রেফ একঘেয়েমি কাটাতে একটু আনন্দসময় সবাইয়ের সাথে ভাগ করে নিতে আমাদের এই উদ্যোগ”। আমি ঘাড় নাড়ি। ওদের জানাই, তোমরা এগিয়ে যাও। আমি সর্বাত্মকভাবে তোমাদের সাহায্য করব, তোমাদের এই শুভ কাজের জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইল। ছেলেমেয়ের দল ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেল। 

  ওরা চলে যেতে মাসিমার সাথে চোখাচোখি হল। উনি হেঁসে বললেন, "ওরা ভালোই গার্জিয়ান ঠাউড়েছে, কোনো কিছুতেই না নেই। সবই তো হবে, শুধু মূর্তিপূজাটাই বাকি থাকবে।" মাসিমার আক্ষেপটা আমাকেও ছুয়েঁ গেল। আমার চোখের সামনে জগজ্জননী মা আবার প্রস্ফুটিত হলেন, কানে বেজে উঠল আরতির বাজনা; ধুপ-ধুনোর ধোঁয়ায় চোখে জল চলে এল, চন্দন আর ধুনোর গন্ধে ভরে উঠল সমগ্র কামরা, আমি মাসিমার কথার উত্তর না দিয়ে জানলার বাইরে দৃষ্টি ফেরালাম। 

   ট্রেনের মানুষগুলোর আচার-আচরণের পরিবর্তন আমাকে মুগধ করেছে। এই মানুষগুলো প্রথমদিকে ভয়ে, আতঙ্কে কুঁকড়ে থাকত। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে আর ছেড়ে আসা বাড়ি, ঘর, উঠোন, বারান্দা আর চিলতে জমির জন্য মাথা খুঁড়ত, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-মারামারি করেছে, ছোটবড় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে, কিন্তু কুড়িটা কামরার হাজার হাজার যাত্রীর মধ্যে কেউ কোনো মহিলাকে অসম্মান করেছে, বা খারাপ কিছু করেছে এরকম ঘটনা একটাও ঘটেনি। এই যে মানবিক বোধের উত্তরণ সেকি মূলচ্ছেদ হওয়ার কারণে, নাকি এরা তথাকথিত সভ্য সমাজের প্রতিভূ নয়! মানুষের মধ্যে পাশবিক প্রবৃত্তি কি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে! কি অনায়াসে সবকিছু ভুলে গান-কবিতা-নাটকে মেতে উঠতে চাইছে। মহামারী এখনও পৃথিবী জুড়ে জাল বিছোচ্ছে, অনিশ্চিতপুর ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে, সেই জরা-ব্যাধিহীন পৃথিবীর কুহক ডাক এদের স্বপ্নে আর ধরা পড়েনা। এরা এখন ট্রেনটাকেই বাস্তব বলে মেনে নিয়েছে, তাদের ঘর, বাড়ি, পৃথিবী সব। একটা মানুষও চোখে পড়েনা, যে উদাস চোখে ছুটে চলা বাইরের জগতের দিকে চেয়ে বসে থাকে। এখন ওরা অনেক বেশি ব্যস্ত, কেউ কর্মহীন বসে থাকেনা। কাউকে কোনো কাজের দায়িত্ব দিতে হয়না। পুরুষ মানুষেরা ঘরের কাজে সাহায্য করে, মহিলারা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশ নেয়, অল্পবয়সীরা বাচ্ছাদের পড়া দেখিয়ে দেয়, তাদের সাথে খেলে। এখন আবার তার পাশাপাশি গান, নাচ, আবৃত্তি, নাটকের তালিমও দেবে। এই ট্রেন ক্রমে ক্রমে এক মহা জনপদে পরিণত হচ্ছে , আর এখানকার বাসিন্দারা স্বাভাবিক জীবনের সব আনন্দকে নিজেদের মতো করে গ্রহণ করতে শিখে যাচ্ছে। সবথেকে বড় কথা, সেই আনন্দ মুহূর্তগুলোকে সবাইয়ের মধ্যে বেটে নিতে শিখেছে।

  একদিন এস ৬-এ একটু দরকারে যাচ্ছিলাম, এস ৫ পেরোবার সময় একটা গান কানে এল। মহিলার গলা, অদ্ভুত খোলা গলা। বুঝলাম একটা ভজনের কয়েকটা লাইন বারবার করছেন। আমাকে বোধহয় দেখতে পায়নি, তাহলে থেমে যেত। আমি কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। কামরার সবাই আমায় দেখছে, আমি ঠোঁটে আঙুল রেখে ওদের কিছু না বলতে ইশারা করলাম। ভজনটা পুরো দরদ ঢেলে গাইছেন মহিলা। আমার বাঁদিকে আপার টায়ারে শুয়ে দেওয়ালের দিকে মুখ করে গেয়ে চলেছেন, 

"শ্যাম তেরি বংশী পুকারে রাধা নাম

শ্যাম তেরি বংশী পুকারে রাধা নাম

লোগ করে মীরা কো ইয়ুঁ হী বদনাম

লোগ করে মীরা কো ইয়ুঁ হী বদনাম।"

গান শেষ হতে চুপচাপ নিজের কাজে এগিয়ে গেলাম। ছেলেমেয়েগুলো ঠিকই বলেছে, ট্রেনের কোণে কোণে এরকম কত হিরে-মোতি লুকিয়ে আছে। মনে মনে ওদের প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানালাম। 

     কয়েকদিন পর থেকেই সমগ্র ট্রেন জুড়ে তুমুল প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। যেখানেই যাও সেখানেই কোনো না কোনো কিছুর তালিম চলছে, গান, নাচ, কবিতা। একদিন আকাশ আর সুদেষ্ণা এসে বলে গেল, নাটক হচ্ছে দুটি দলের। সেই দলদুটো ঠিক করেছে ঘুরে ঘুরে সব কামরাতেই শো করবে। হ্যাঁ মেয়েটার নাম জেনেছি- সুদেষ্ণা, পাশের কামরাতেই থাকে। প্রথমদিনই আকাশ পরিচয় করাতে নিয়ে এসেছিল। মেয়েটি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে, কিন্তু কলেজে ভর্তি করানোর সঙ্গতি বাবার ছিলনা, তাই লেখাপড়ায় ইতি দিতে হয়েছিল। এখানে এসে আবার পড়াশোনার সাথে যুক্ত হতে পারে খুব ভালো লাগছে। আমি বললাম, এ তো খুব ভালো। তুমি নিজে যা শিখেছো সেই আলো মন দিয়ে বাচ্ছাগুলোর মধ্যে জ্বেলে দাও, তাহলেই দেখবে তোমার মধ্যেকার আলোটা দ্বিগুন প্রজ্জ্বলিত হবে। কদিনই চোখে পড়ছে ছেলেমেয়ে দুটি সবসময় কাছাকাছি থাকছে, সব কাজ একসাথে করছে। এখন আকাশকে দেখে কে বলবে, এই সেই মনখারাপ করে বসে থাকা ছেলেটা, যে একদিন কাতর আবেদন করেছিল ট্রেন থামিয়ে নামিয়ে দেওয়ার জন্য। আজ তার মুখে এক আকাশ রোদ্দুর। প্রেম কি মানুষকে এভাবেই স্নিগ্ধ, সুন্দর, নির্মল করে তোলে! সত্যি! সর্বক্ষেত্রে সত্যি!

 

"আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্ৰছায়ায় লুকোচুরি খেলা রে ভাই--

                                লুকোচুরি খেলা।

নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই--

                                লুকোচুরি খেলা।।

আজ ভ্রমর ভোলে মধু খেতে--- উড়ে বেড়ায় আলো মেতে,

আজ কিসের তরে নদীর চরে চখা-চখীর মেলা।

নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই---

                                লুকোচুরি খেলা।।"

একপাশে প্রশস্ত ধানজমি, যার মাথাগুলো কে যেন সোনা দিয়ে মুড়ে দিয়েছে। অঘ্রানে ধান পেকেছে, কদিন পরেই নবান্ন উৎসব শুরু হবে। স্টেজে বাচ্ছা মেয়েদের একটা দল গানের সুরে-তালে নেচে যাচ্ছে। ধান ওঠার মরশুমে গ্রামে একটা বিচিত্রানুষ্ঠান হত। গ্রামের কচি-কাঁচারাই তাতে অংশ নিত। পাড়ার ক্লাবে সমীরণদা আর শ্রাবনীদি সবাইকে শেখাত। আমি কখনোই কিছুতে দড় ছিলামনা। তবু মা একবার জোর করে কবিতা আবৃত্তি করতে স্টেজে উঠিয়ে দিয়েছিল। তার পরিণতি হয়েছিল খুব ভয়ঙ্কর। মাঝপথে সব ভুলে ঘেমে-নিয়ে কেঁদে-কেটে একশা করেছিলাম। তারপর আর কোনোদিন ওই ভুল করিনি। ওই আমার জীবনে প্রথম এবং শেষ স্টেজে ওঠা হয়ে আছে। তাই এরমধ্যে ছেলেমেয়েগুলো যখন আমাকে এসে ধরল কিছু একটা করতে হবে, আমি সোজা হাত তুলে দিলাম। ওদের বোঝালাম, সবাইয়ের দ্বারা সব কিছু হয়না আর শোভনও নয়। কিন্তু ওরা তারপরও জোর করতে বাধ্য হয়ে ছোটবেলার গল্পটা শোনাতে হল। ওরা হাসতে-হাসতে চলে গেল, আমি নিষ্কৃতি পেলাম। 

  ছোটবেলায় ওই কীর্তির পরেরদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে একটা মেয়ে আমার পথ আটকে দাঁড়াল, তারও পরনে স্কুল ইউনিফর্ম। মেয়েটিকে আমি চিনি আমাদের পাড়াতেই বাড়ি। ও আগের দিন নাচের গ্রুপে লিড দিচ্ছিল। মেয়েটি আমার থেকে এক ক্লাস নিচুতে পড়ে, কিন্তু কোমরে হাত রেখে প্রায় ধমকের সুরে বলে উঠল, "এই! তুই অত হাঁদা কেন রে! স্টেজে উঠে একটা ছোট কবিতাও মুখস্থ বলতে পারিস না!" আমি লজ্জা পাবো না রেগে উঠব বুঝে উঠতে পারলাম না। তবে একটা কারণে একটু রাগ রাগ বোধ হল, আমার থেকে এক ক্লাস নিচুতে পড়েও আমাকে কেমন তুইতোকারি করছে। আমি কি বলবো বুঝতে না পেরে চুপ করে রইলাম।

"কি রে! তুই আবার বোবাও নাকি! দেখিস আবার কালকের মত ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলিস না"। এই বলে খিলখিল করে হাঁসতে হাঁসতে দৌড়ে পালিয়ে গেল। মেয়েটি চলে যাওয়ার পর আমার শরীরে সব রাগ ফিরে এল। আমি নিষ্ফল আক্রোশে মাটিতে পা ঠুকতে লাগলাম।

    তারপর বেশ কয়েকবছর মেয়েটি আমাকে সমানে শাসন করে গেছে। আমার কোনো কিছুই তার পছন্দ হত না। আমার বোকামি, আমার একা থাকা, পড়াশোনায় অমনোযোগ, সর্বোপরি বিএ পাশ করার পর চাকরির চেষ্টা না করে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানো, কোনোটাই সে মেনে নিতে পারতো না। খুব রেগে যেত, মাঝে মাঝে রাগে অন্ধ হয়ে কেঁদে ফেলত। ওর বাবার সঙ্গে আমার বাবার বন্ধুত্ব ছিল। মজুমদার কাকু মাঝে মাঝে বাবার অবসর সময়ে গল্প করতে আমাদের বাড়ি আসত। রবিবার সকালে এলে আমাদের সাথে ব্রেকফাস্ট করত, অনেকক্ষণ থাকত। সেই সময় বাবাকে ডাকতে মাঝে মাঝে তমসা আমাদের বাড়ি আসত। আর আসামাত্রই সবাইয়ের কাছে আমার বিরুদ্ধে হাজারটা নালিশ করত। দুই বাবা আমাদের সম্পর্কটা নিয়ে সোচ্চার না হলেও মনে মনে অবশ্যই কিছু একটা ভাবত। একমাত্র মা-ই আমাকে বুঝতে পারত, মা ঠিক বুঝেছিল আমি খাঁচায় ধরা পড়ার ছেলে নয়। তাই মধ্যে মধ্যে তমসাকে বোঝাত। রান্নাঘরে বসে দুজনের কি কথা হত সব শুনতে পেতামনা, তবে ওই দিনগুলো যাওয়ার সময় আমার সাথে দেখা না করেই তমসা চলে যেত। আমি বুঝতে পারছিলাম এবার আমাকে পালাতে হবে, তা নাহলে বড় দেরি হয়ে যাবে। তমসা যেভাবে আমাকে একটু একটু করে অধিকার করে ফেলছে, সেখানে বাঁধা পড়ে গেলে দমবন্ধ হয়ে মারা পড়ব। অবশেষে তমসার মা যেদিন বিশেষ প্রস্তাব নিয়ে আমাদের বাড়ি এল, তার পরের ভোরে আমি পালালাম।

   অনেকদিন পর ছোটবেলার দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। বাবা-মা, তমসা, মজুমদার কাকু, কাকিমা, তমসার ভাই গৈরিক। সেবার বাড়ি ফিরতে বছর গড়িয়ে গিয়েছিল। তমসার সেবছরই বিয়ে হয়েছে, ছেলে ইঞ্জিনিয়ার; বিয়ের পরপরই তমসাকে নিয়ে আমেরিকা পাড়ি দিয়েছে, বাবাকে ফিরে আর দেখতে পাইনি। মায়ের মুখে দুটো ঘটনা শুনে আমার পাষাণ হৃদয়ও কেঁপে উঠছিল। এক, আমি চলে যাবার পর বিয়ের আগের দিন পর্যন্ত মায়ের কাছে এসে তমসা রোজ কাঁদত; আর মারা যাবার আগে দু-তিনদিন ধরে দু- হাত বাড়িয়ে বাবা কেবল আমাকেই খুঁজত। আকাশ আর সুদেষ্ণাকে দেখে সব মনে পড়ে গেল। সুদেষ্ণাও তমসার মত আকাশকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলেছে। তবে আকাশ সুখময় নয়, তার নীরব সমর্পণ অনেকটা দেবীর পায়ে সমর্পণ করা অঞ্জলীর ফুলের মত। ও কোনোদিন সুদেষ্ণাকে কষ্ট দেবেনা। এইটুকু বয়সেই ছেলেটি জীবন দিয়ে বুঝেছে, স্নেহ-ভালোবাসা অতি বিষম বস্তু।

                                                      (ক্রমশঃ………..)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ