সর্বশেষ

10/সর্বশেষ/ticker-posts

কোন সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে: শেষ পর্ব

ড. গৌতম সরকার

কটাদিন স্বপ্নের মধ্যে কাটলো। ছেলেমেয়েগুলো যে এইরকম একটা অসাধ্য সাধন করবে ভাবা যায়নি। এই ছিন্নমূল মানুষগুলো তাদের জীবনের না পাওয়া, ক্ষোভ, খেদ, ভয়, আতঙ্ক, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সবকিছু ভুলে শুধু আনন্দস্রোতে ভেসে গিয়েছিল। সব ব্যবস্থা এত নিখুঁত হয়েছে, কে বলবে এটা একটা চলন্ত ট্রেন। আর এই গরীব, অর্ধ শিক্ষিত মানুষগুলোর মধ্যে এত প্রতিভা লুকিয়ে আছে সেটা এরকম একটা আয়োজন ছাড়া কখনোই বোঝা যেত না। হ্যাঁ, যোগাড়যন্ত্র ইত্যাদি কাজে কিছু যোগাযোগ আমাকে করতে হয়েছে, কয়েকজনকে ফোন করে খুব প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস যোগাড়ের ব্যবস্থা করতে হয়েছে, কিন্তু আসল হ্যাপাটা ওরাই সামলেছে। আমাকে বা আমাদের মত প্রবীণ মানুষদের প্রায় কিছুই করতে হয়নি। নিজেদের যতটুকু রিসোর্স ছিল সেটুকুকে কি সুন্দর ব্যবহার করে সবকিছু সাজিয়েছে, আট থেকে আশি সব বয়সী মানুষগুলোকে রিহার্সেল দিয়ে তাদের মধ্যেকার শৈল্পিক সত্তার হান্ড্রেড পার্সেন্ট প্রকাশ ঘটিয়েছে। এসব তারা এত আন্তরিক ভাবে করেছে যাতে করে সমগ্র অনুষ্ঠানটি সর্বাঙ্গসুন্দর হয়ে উঠেছে। ওই কটাদিন কামরার পর কামরাতে নাচ, গান, নাটক, কবিতার যে মহল তৈরি হয়েছিল, তখন মুহূর্তের জন্যেও মনে হয়নি এটা একটা চলন্ত ট্রেন আর ছিন্নমূল মানুষগুলো এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পানে অন্ধভাবে ছুটে চলেছে। আমার মত স্টেজবিমুখ লোককে দিয়েও একটা গান গাইয়ে নিয়েছে। ভুল লিরিকসে বেসুরো সেই গান গেয়ে যে পরিমান হাততালি পেয়েছি, সেটা হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, বা বড়ে গোলাম আলী সাহেবও তাঁদের বন্দিশে কখনও পাননি। এই উদ্যোগের সব চেয়ে বড় লাভ যেটা চোখে পড়ছে, সেটা হল গোটা ট্রেনটা এখন একটা বৃহত্তর পরিবার হয়ে গেছে। মানুষে মানুষে পরিচয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একে অপরের দুঃখ-সুখ ভাগ করে নিচ্ছে; একের প্রয়োজনে অন্যজন ঝাঁপিয়ে পড়ছে; একের খামতি অন্য মানুষ নিজের উদ্যোগে পূরণ করে দিচ্ছে, আর সেই সঙ্গে টের পাচ্ছি আমার চাপ, দায়িত্ব, চিন্তা আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। পরিবেশের কারণেই হোক বা মাসিমার ঐকান্তিক পরিচর্যায় মেসোমশাই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন; আকাশ এত ব্যস্ত হয়ে উঠেছে যে ওকে আর নিজের জায়গায় পাওয়াই যায়না, আর ওর সঙ্গে ছায়ার মত লেগে থেকে কাজের দায়িত্ব ভাগ করে নিচ্ছে সুদেষ্ণা। বাউল এখন একা একাই বসে গুনগুন করে, মাঝে মাঝে গিয়ে আমি পাশে বসি। আমাকে দেখেই ওর চোখ দুটো চকচক করে ওঠে। নিজে থেকেই বলে ওঠে, 

"বাবু একটা গান গাই! শুনবেন?"

আমি হেঁসে বলি, 

"তোমার সঙ্গিনী কোথায়?"

 আমার প্রশ্ন শুনেই নিমপাতা গেলার মত মুখ করে উত্তর দেয়, 

"ওর কথা আর বলবেন না বাবু। আমার পাশে একদন্ড বসার সময় কোথায়?"

আমি মুখে হাঁসি জিইয়ে রেখে বলি, 

"কেন, তার আবার কি হল?" এরপর বাউল গলায় ছদ্মরাগ এনে বলে ওঠে,

"বাবু, আপনি তো সব জানেন, তারপরও জিজ্ঞাসা করছেন।" আমি হো হো করে হেঁসে উঠি। বাউলের সাধন সঙ্গিনী এখন ট্রেনের চাইল্ড কেয়ার ইউনিটের মেম্বার হয়েছে। ওটা আমরাই মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়ে বানিয়েছি। ট্রেনের যত দশ বছরের মধ্যে বাচ্চা আছে তাদের ঠিকঠাক দেখভাল করা। পোলিও খাওয়ানো হয়েছে কিনা, ভ্যাকসিনের কোনো ডোজ বাকি আছে কিনা, এছাড়া যদি অপুষ্টি থাকে, ওজন কম হয় বা কোনো রোগে আক্রান্ত হয় সেগুলো নোট করে রাখা। আরেকটি কমিটি আছে- হেল্থ অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার; চাইল্ড কেয়ার ইউনিট এদের কাছে রিপোর্ট পেশ করলে এই কমিটি যথাযথ ব্যবস্থা নেয়। এই শেষ কমিটির কাজে আমিও সাহায্য করি। আমি আমার সেই বন্ধুকে ফোন করে দিলে ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়ে দেয়। তারপর বিভিন্ন স্টেশনে সাহায্য পৌঁছে যায়।

    গত মিটিংয়ে কমিটিগুলোকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের উদ্যম ও উৎসাহ দেখে আমার মত অনেক প্রবীণই স্বেচ্ছায় নিজেদের জায়গা ছেড়ে অল্পবয়সীদের কমিটিতে ঢুকিয়েছে। তরুনদল প্রথমে খুব আপত্তি জানিয়েছিল, কিন্তু আমরা তাদের বুঝিয়েছি- আমরা কমিটিতে থাকছিনা মানে একেবারে 'নেই হয়ে যাচ্ছি' ভাবার কোনও কারণ নেই। আমরা যেমন ছিলাম তেমনই থাকবো, শুধু উদ্যোগটা শুরু করবে তোমরা। প্রকৃতির নিয়মে তোমরা যতটা হাঁকডাক, ছুটোছুটি করে কাজ করতে পারবে, আমরা তো ততটা পারবো না। তবে আমাকে খুব বেশি রেহাই দেয়নি, অন্যদের কান বাঁচিয়ে বলেছে, "কাকু আপনাকে ছাড়া আমাদের চলবেনা, আপনাকে বেশি দৌড়াদৌড়ি করতে হবেনা, আপনি শুধু আমাদের গাইড করবেন তাহলেই হবে"। তবে আমি টের পাচ্ছিলাম , ওরা এত তাড়াতাড়ি স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে, আমাকে ওদের আর বেশিদিন লাগবে না, আমাকে ছাড়াই এই অনিশ্চিতপুরগামী গতিযানটিকে সঠিক দিশা দিতে পারবে। আমার মুখে একটা নিশ্চিন্ততার হাঁসি খেলে যায়। সামনের সিটে চোখ পড়াতে দেখি মেসোমশাই গভীরভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, আমার মনের সব কথা যেন পড়ে নিতে চাইছেন। আমি ওনার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে জানলার বাইরে তাকাই। হঠাৎ একটা গলা শুনে চমকে উঠি। চোখ বুজে বালিশে মাথা রাখতে রাখতে উনি বিড়বিড় করে বলছেন, "তোমার কিন্তু এখনও অনেক কাজ বাকি আছে।"

     একদিন সকালের দিকে আমি মন দিয়ে কাজ করছি, মুখ জানলার দিকে, মাসিমা এককাপ লিকার চা দিয়ে গেছে তাই চুমুক দিচ্ছি। এমন সময় পিছনে কেউ গলায় আওয়াজ করল, উপস্থিতি জানান দিতে মানুষ যেমন আওয়াজ করে তেমন। আমি পিছন ফিরে তাকাই। দেখি আকাশ দাঁড়িয়ে আছে আর তার কিছুটা পিছনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সুদেষ্ণা। আমি ঘুরে বসি, আকাশের দিকে তাকিয়ে বলি,

"কী ব্যাপার আকাশ! সকালবেলা কিসের তলব?" 

আমার কথায় ও লজ্জা পেয়ে যায়। পিছন ফিরে সুদেষ্ণার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় কাছে আসতে বলে। মুখে বলে,

"না স্যার, কি যে বলেন! আপনাকে আমি তলব করবো! আসলে আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছি"৷ একথা বলে আবার সুদেষ্ণার দিকে তাকায়। সুদেষ্ণা একটু এগিয়ে এসেছে, কিন্তু আমার দিকে সোজা চোখে তাকাচ্ছে না। সারা মুখে হালকা লজ্জা রঙ মাখামাখি হয়ে রয়েছে। মনে মনে ভাবলাম কিছু সুখবর নিয়েই এসেছে ওরা। কিন্তু এব্যাপারে আমাকে ধন্যবাদ কেন দিতে এসেছে বুঝতে পারলাম না। আকাশ গলাটা আরেকবার পরিষ্কার করে বললো, 

"আমি বাবার চিঠি পেয়েছি, ওরা ভালো আছে।" 

এবার আকাশের সারা মুখে আলো রঙ খেলে গেল, মাথা নিচু করে আঙুল দিয়ে মাটি খুঁড়তে না পেরে কামরার পাতাতনেই ঘষতে লাগল। এবার মনে পড়ল, বেশ কিছুদিন আগে একদিন রাত্রিবেলা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। রাত্রি গভীর হলে আমি জানালার বাইরে তাকিয়ে জমাটবাঁধা অন্ধকারের সাথে কথা বলি। কত কথা চালাচালি হয়! অন্ধকারের মধ্যেও কত কি দেখতে পাই! তখন আমার যেন দিব্যদর্শন হয়। সেইরকম এক রাত্রে আকাশ পা টিপে টিপে আমার কাছে এসেছিল। সেদিনও সে অঝোরে কাঁদছিল। আমার পায়ের কাছে মাটিতে বসে আমার পা দুটো শক্ত হাতে আঁকড়ে ধরেছিল। আমি চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারিনি। আমার দুপায়ের ওপর মাথা রেখে একটা শব্দও উচ্চারণ না করে কেঁদে যাচ্ছিল। আমি আবার আমার বন্ধুর শরণাপন্ন হয়েছিলাম। সে তো প্রতি মাস দেড়েক আগের কথা, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। শুনে বললাম, 

"বাঃ এতো খুব ভালো কথা। যাক, তুমি তাহলে নিশ্চিন্ত হলে"। 

আকাশের মুখটা আবার রঙ হারালো, কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,

"অনিশ্চিতপুরে পৌঁছনোর পর আমার বাবা-মাকে আমার কাছে এনে দেবেন, স্যার!" 

আমি কিছু বলিনা, মুখে একটা ডিপ্লোম্যাটিক মুচকি হাঁসি ঝুলিয়ে রাখি। এবার আকাশ নিচু হয়ে চট করে আমায় প্রণাম করে ফেলে। আমাকে অবাক হওয়ার অবকাশ না দিয়ে সুদেষ্ণাও পা ছোঁয়। অন্যদিকে মূখ ফিরিয়ে আকাশ বলে ওঠে, 

"আপনি আমার বাবা-মাকে এনে দেওয়ার পর আমরা দুজন বিয়ে করবো"।

আমি তারপরও কোনো কথা বলিনা, মুখের হাঁসিটা বজায় রাখি। আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে 'সুজলাং-সুফলাং- মলয়জশীতলাম- শস্যশ্যামলাং' জন্মভূমি, যেখানে সোনারঙ ফসলের উপর দিয়ে 'ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে'। আমি দাঁড়িয়ে পড়ি। দুজনের মাথায় হাত রেখে বিড়বিড় করি, " তোমরা সুখী হও, সুখী হও, সুখী হও।"

    চিঠিটা অবশেষে এল, নীল রঙের খামের চিঠি। খামটা খুলিনি, কারণ আমি জানি চিঠিতে কী লেখা আছে! কদিন ধরেই মনে হচ্ছিল, কিছু একটা হবে... মনে হচ্ছিল এই চলতে থাকা সময়টা শেষ হয়ে আসছে, রাতের আঁধারে পাথরচাপা অন্ধকারে আমি একটা যতিচিহ্ন দেখতে পেতাম। টের পাচ্ছিলাম কেউ যেন ছুটির ঘন্টা নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে। তবে এ ছুটি সে ছুটি নয়, এ ছুটি চিরন্তন নয়, সাময়িক। সে ছুটি টের পাওয়ার মত ঐহিক শক্তি কোথায়। আমি তো নিতান্ত এলেবেলে সংসারে থেকেও না থাকা এক বেফালতু মানুষ। তাঁকে নিয়েও যে সমাজের চিন্তাভাবনা আছে, সামাজিক মানুষগুলো ভুল বা ঠিক যাই হোকনা কেন একটু কদর দিচ্ছে, আদর-আশকারা-সম্মান দিচ্ছে এতেই আমি কৃতার্থ। তাই ছুটির ঘন্টা বাজলে কাউকে কোনো প্রশ্ন না করে চলে যেতে হবে। শুধু খেয়াল রাখতে হবে আমার চোখে-মুখে কোথাও যেন দুঃখ বা ক্লান্তির কোনো চিহ্ন ধরা না দেয়। গরিবগুর্ব মানুষগুলো বড় ভালোবাসে, কেন বাসে জানিনা, তবে এতগুলো চোখের আর্তির বেড়া টপকিয়ে আমার পক্ষে চলে যাওয়া সম্ভব নয়। দিনক্ষণ কিছুই আমি জানিনা, আমি শুধু সেই মুহূর্তের অপেক্ষায় পল-প্রহর গুনতে থাকি।

     ইদানিং অদ্ভুত আলস্য টের পাই, যেদিকে চোখ ফেরাই সব কিছু বড় আপন মনে হয়। আকাশের পাঠশালা আমার বুকের ভেতরে নামতা পড়তে শুরু করে, মাসিমার লক্ষ্মী পূজো আমার পাঁজরে পাঁজরে শঙ্খধ্বনি তোলে, বাউলের মাঠভাঙা সুরের পালতোলা গান আমার মজ্জায় মজ্জায় সেতারের সরগম বাজিয়ে চলে... আমি কোথায় যাবো! এসব ছেড়ে এদের ছেড়ে কোথায় যাওয়ার নির্দেশ এলো? আমি সেই নীল খাম এখনও ছিঁড়িনি...কারণ ছেঁড়া না ছেঁড়া দুইই সমান, আমি খুব ভালো করে জানি ওটাতে কি লেখা আছে। অভিনয়ে কোনদিনই পটু ছিলামনা, কোন ছোটবেলায় মা একবার জোর করে স্টেজে তুলে দিয়েছিল, তার পরিণতি হয়েছিল খুব মর্মান্তিক। জীবনের মঞ্চেও কখনও অভিনয় করার প্রয়োজন পড়েনি। আমি কোনদিনই মিথ্যে কথা বলতে পারিনা, চেষ্টা করলে একটা দুধের বাচ্ছাও ধরে ফেলে। এই কদিনে এত লোককে কৈফিয়ত দিতে হল যে আমার কী হয়েছে...! মিথ্যা কথা বলতে বলতে আর মনে কষ্ট পেতে পেতে সত্যি সত্যি অসুস্থ বোধ করলাম। এখন বেশিরভাগ সময়ই নিজের সিটে শুয়ে থাকি। ট্রেনটাকে আবার স্রেফ ট্রেন বলেই মনে হয়। এরমধ্যে যে একটা প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়েছিল সে কবে যেন মরে গেছে। সিটের সাথে নিজেকে মিশিয়ে দিতে দিতে আমি শুধু সেই মুহূর্তটার অপেক্ষায় থাকি।

    কুয়াশার কি কোনো রঙ হয়! কোনোদিন ভেবে দেখিনি....এত ঘন নীল কোথা থেকে আসছে! ভোরের রঙ কি এত গাঢ় হতে পারে! এভাবে ভোর তো কখনও দেখা হয়ে ওঠেনি....

ঘুমের মধ্যে ট্রেনটা থেমে গেছে....কতক্ষণ থেমে আছে জানিনা। সারারাত অপেক্ষা করে করে ভোর রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তাই ঘন্টার শব্দ শুনতে পাইনি। সত্যি কি কোনও ঘন্টা বেজেছিল? যাত্রাশেষের ঘন্টা! আমি আস্তে আস্তে উঠে বসি....ট্রেনের পার্থিব আলো-অন্ধকার পেরিয়ে, মানুষজনের গাঢ় নিদ্রা গন্ধ ছাড়িয়ে এক অপার্থিব নির্জন স্টেশনের প্লাটফর্মে পা রাখি। আর তখনই গাঢ় নীল ভোর আমাকে ঢেকে নেয়। আমি আস্তে আস্তে এগিয়ে চলি। পিছনে কালো বর্ণের অজগর ট্রেনটা পড়ে থাকে নিশ্চুপ, নিষ্প্রাণ। আমি পিছন ফিরে তাকাই না। অজস্র নীলের মধ্যে দিয়ে অলস পায়ে হেঁটে চলি প্ল্যাটফর্ম বরাবর। বহু দূরে একটা হলুদ ম্লান আলো জ্বলছে নিভছে। আমি সেই আলোর নিশানা ধরে এগোতে থাকি। নীল ভোর পিছলে পিছলে সরে যায়, আমার জামা-প্যান্ট বর্ণহীন কুয়াশায় ভিজতে থাকে। আমার পথচলা চলতেই থাকে। হঠাৎ আশপাশ চমকে দিয়ে প্রচন্ড আওয়াজে সিটি মেরে অজগর ট্রেন অনিশ্চিতপুরের লক্ষ্যে চলতে শুরু করে। আমি এতটুকু চমকাই না, পিছনে ফিরে তাকাই না। একটা নীল রঙের খাম হাতে ধীর গতিতে হলুদ আলোর লক্ষ্যে এগিয়ে চলি।

                                                                         (শেষ…….)                                                                                                                                      


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ