সর্বশেষ

10/সর্বশেষ/ticker-posts

বাংলা নাটকের উন্মেষ কাল এবং মাইকেল মধুসূদন দত্ত



 ডঃ গৌতম সরকার

বাংলার সাহিত্যের আকাশে তাঁর আবির্ভাব অনেকটা ধূমকেতুর মতো, সেই আকস্মিক আবির্ভাবে পাল্টে দিয়েছিলেন বাংলা ভাষার খোল-নলচে; বিশেষ করে তাঁকে বাংলা নাটক ও থিয়েটারের প্রাণপুরুষ বা প্রবাদপুরুষ বললে অত্যুক্তি হবেনা। তিনি আসার আগে , বাংলা ভাষায় লিখিত না ছিল ভালো নাটক, না ছিল অভিনয় করার ন্যূনতম পরিকাঠামো। অথচ এই মানুষটি প্রথম জীবনে ছিলেন বাংলা ভাষার প্রবল বিরোধী, তখন অতি বড় কাছের মানুষও কখনও ভাবেননি, এই মানুষটা মাতৃভাষায় সাহিত্য সাধনা করবে। তৎকালীন গদ্যসাহিত্যের দৈন্য দশা এবং সংস্কৃত ভাষার উপর অন্ধ নির্ভরতা তাঁকে এই ভাষায় সাহিত্য রচনায় নিরুৎসাহিত করেছে। তখন তার চোখে ভেসে বেড়াচ্ছে-শেক্সপিয়ার, বায়রন, শেলি; ইংরেজিভাষায় সাহিত্যসেবা আর বায়রন, শেলির দেশে পৌঁছানোর স্বপ্ন । কিন্তু সেই প্রাচীনকালে বিদেশযাত্রা মোটেই সহজ ছিলনা, যারা যেত সমাজপতিরা তাঁদের জাতিচ্যূত করতো। সেই সমস্যা কাটাতে মাত্র উনিশ বছর বয়সে তিনি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহন করেন এবং এক তামিল সহপাঠীর সাহায্যে ১৮৪৭ সালের শেষের দিকে মাদ্রাজ পাড়ি দিলেন। দীর্ঘ আটবছরে মাদ্রাজ থাকাকালীন আত্মীয়-পরিজনদের সাথে কোনো যোগাযোগ ছিলনা। এই সময়ের মধ্যেই তিনি বাবা, মা দুজনকেই হারিয়েছেন, কোনো খবর পাননি। আত্মীয়-পরিজন তাঁকে মৃতই ধরে নিয়েছিলেন, তাঁর ভাগের পৈতৃক সম্পত্তিও বেদখল হয়ে গিয়েছিল।


আটবছরের প্রবাসকালে মধুসূদন দত্ত বহু কাজ করেছেন- শিক্ষকতা, সংবাদপত্রে চাকরি, এমনকি সংবাদপত্র প্রকাশনা এবং সম্পাদনা কাজের সাথেও যুক্ত ছিলেন। ১৮৪৯ সালে এখানকার  ‘মাদ্রাজ মেল এসাইলাম' স্কুলে শিক্ষকতা করার সময় ওই স্কুলেরই এক ছাত্রী রেবেকা ম্যাক্টাভিল কে বিবাহ করেন; যদিও ১৮৫৫ সালে এই বিয়ে ভেঙে যায়। ওই বছরই ডিসেম্বর মাসে তিনি বিয়ে করেন ফরাসি মহিলা এমিলিয়া হেনরিয়েটাকে। এরমধ্যেই তাঁর ইংরেজিতে লেখা কবিতা আর প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে এবং বিদ্বজনমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। এসময় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গ্রন্থ 'ক্যাপটিভ লেডি'। সরস্বতী সাধনায় মত্ত কবি লক্ষ্মীর কৃপা কোনদিনই পাননি। ক্যাপটিভ লেডি পড়ে মুগ্ধ হয়ে ভারতবন্ধু শিক্ষাবিদ ড্রিংকওয়াটার বেথুন বলেন, এই সাহিত্যপ্রতিভা মাতৃভাষায় নিয়োজিত হলে সেই ভাষা সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। বাল্যবন্ধু গৌরদাস বসাক বেথুনের প্রশংসা জানিয়ে মধুসূদনকে এক পত্রে লেখেন, " আমরা ইংরাজি সাহিত্যে আর একজন বায়রন কিংবা শেলি চাই না, আমরা চাই বাংলা সাহিত্যে একজন বায়রন কিংবা শেলি।" মধুসূদনের তখন মোহভঙ্গ হয়েছে, ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে যে উচ্চাকাঙ্খা পোষণ করতেন সেটা অনেকটা টলে গেছে, সর্বোপরি আর্থিক দৈন্যতা তাঁর আত্মবিশ্বাসে আঘাত হেনেছে, যার ফলশ্রুতিতে গৌরদাসের চিঠি আর বেথুনের প্রশংসা তাঁকে কলকাতায় ফিরে আসার প্রত্যয় যোগায়। ১৮৫৬ সালে ২ রা জানুয়ারি রিক্ত হাতে কোলকাতায় ফিরলেন, পরে হিতৈষীদের চেষ্টায় পুলিশ কোর্টে কেরানীর এক কাজে যোগ দিলেন।


বাংলা থিয়েটারে মধুসূদন দত্তের অবদান আলোচনার আগে আমাদের দেশে থিয়েটারের আদি পর্বটা ঘুরে আসা যাক। নাটক বা থিয়েটার যাই বলা হোক না কেন, সেটা এই দেশে এসেছে ইংরেজদের হাত ধরে। পলাশীর যুদ্ধ জেতার পর ইংরেজরা এদেশে পাকাপাকিভাবে বসবাস করতে শুরু করে, তখন নিজেদের বিনোদনের জন্য লালবাজারের কাছে একটা থিয়েটার হল প্রতিষ্ঠা করে- প্লে হাউস। বাংলা থিয়েটারের কথা তখন আকাশকুসুম কল্পনা ছিল। তার বহু পরে ১৭৯৫ সালে গেরেসিম লেবেডফ নামের এক রুশ পর্যটক ভারতে আসেন। তিনি এদেশে থেকে বাংলা ভাষা শেখেন এবং একটি ইংরেজি প্রহসন 'দ্য ডিসগাইস ' বাংলায় রূপান্তর করেন এবং নাম দেন-'কাল্পনিক সঙ বদল'। শোনা যায়, কয়েকজন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দিয়ে তিনি এজরা স্ট্রিটের কাছে এক অস্থায়ী মন্ধ্যে এই নাটক মঞ্চস্থ করেছিলেন। তারপর দীর্ঘকাল কেটে গেল, ১৮৩৫ সাল নাগাদ কোলকাতায় বাংলা নাটক অভিনয়ের সংবাদ শোনা যায়। সেইসময় কোলকাতার তথাকথিত বাবু সম্প্রদায় ইংরেজদের অনুকরণে নিজস্ব বাটি বা বাগানবাড়িতে শখের থিয়েটার দল খুলতে শুরু করেন। যদিও সেই সমস্ত অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার ছিলনা।

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পাইকপাড়ার রাজা ঈশ্বরচন্দ্র সিংহ তাঁর বেলগাছিয়ার বাগানবাড়িতে 'বেলগাছিয়া নাট্যশালার ' পত্তন করেন। এই নাট্যশালার হাত ধরেই পরবর্তীকালে বাংলা থিয়েটারের পূর্ণ উন্মেষ ঘটে। এই নাট্যশালায় অভিনীত হয়, রামনারায়ন তর্করত্ন বিরচিত নাটক 'রত্নাবলী'। সেসময় বাবুদের বাড়ির অনুষ্ঠানে প্রচুর মান্যগন্য ইংরেজ সাহেব-মেমদের উপস্থিতি থাকতো। তাঁদের সুবিধার্থে ঈশ্বরচন্দ্র এই নাটকের ইংরেজিতে রূপান্তর চাইলেন। গৌরদাস বসাকের পরামর্শে এই রূপান্তরের বরাত পেলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তাঁর অনুবাদের ভূয়সী প্রশংসা হল, আর মধুসূদন কলকাতার অভিজাত মহলে পরিচিত হলেন। অনুবাদ ভালো হলেও এই নাটকের রিহার্সালে কুশীলবদের দেখে আর নাট্য পরিচালনার মান মধুসূদনকে হতাশ করলো। তিনি বন্ধু গৌরদাসকে বললেন- What a pity ! The rajas should had spent a lot of money on such a miserable play! বাংলা গদ্য সাহিত্যের সেই প্রথম যুগে ভাষার এই দৈন্যতা দেখে তিনি কলম ধরলেন, আর রচিত হলো বাংলা থিয়েটারের নতুন ইতিহাস।

তার প্রথম লিখিত নাটক 'শর্মিষ্ঠা'; এই নাটকের মুখবন্ধেই লিখলেন তার নাটক লেখার পিছনের কাহিনী-

" কোথা বাল্মীকি ব্যাস   কোথা তব কালিদাস

          কোথা ভবভূতি মহোদয়।

  অলীক কুনাট্য রঙ্গে   মজে লোকে রাঢ়ে বঙ্গে

          নিরখিয়া প্রাণে নাহি সয়।

  সুধারস অনাদরে    বিষবারি পান করে

          তাহে হয় তনু মনঃক্ষয়

  মধু বলে জাগো মা গো   বিভুস্থানে এই মাগ

        সুরসে প্রবৃত্ত হউক তবে তনয় নিচয়।

মহাভারতের আদিপর্বের যযাতি-দেবযানী উপাখ্যান কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে রচিত এই নাটক। ১৮৫৯ সালের ৩ রা সেপ্টেম্বর বেলগাছিয়া থিয়েটারে শর্মিষ্ঠা নাটকটি মঞ্চস্থ হয় এবিং বহু প্রশংসিত হয়। তিনিই প্রথম যিনি বাংলা নাটকে সংস্কৃত নাট্যরীতির কোনোরকম অনুকরণ না করে একটা নির্দিষ্ট ভাষা এবং ফরম্যাট দিয়েছিলেন। শর্মিষ্ঠা নাটকের সাফল্য তাঁকে পুরোপুরি বাংলা সাহিত্য সেবায় মজিয়ে দিল। সেই সময়ই লিখলেন তাঁর বিখ্যাত কবিতা :

হে বঙ্গ, ভান্ডারে তবে বিবিধ রতন ;

তা সবে, (অবোধ আমি !) অবহেলা করি,

পর-ধন-লোভে-মত্ত, করিনু ভ্রমণ

পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষনে আচরি।

কাটাইনু বহুদিন সুখ পরিহরি।

অনিদ্রায়, নিরাহারে সপি কায়, মনঃ

মজিনু বিফল তপে অবরেণ্যে বরি ;

কেলিনু শৈবালে; ভুলি কমল-কানন !

স্বপ্নে তবে কুললক্ষী কয়ে দিলা পরে-

" ওরে বাছা, মাতৃ কোষে রতনের রাজি,

এ ভিখারী দশা তবে কেন তোর আজি ?

যা ফিরি অজ্ঞান তুই, যারে ফিরি ঘরে ! " 

পালিলাম আজ্ঞা সুখে; পাইলাম কালে

মাতৃ-ভাষা-রূপে খনি, পূর্ণ মনিজালে।

তারপর মধুসূদনকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। শর্মিষ্ঠার পর রচনা করলেন দুটি বিখ্যাত প্রহসন- প্রাচীন ব্রাহ্মণ সমাজপতিদের কদাচার, লাম্পট্য বর্ণনা করলেন , 'বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ' প্রহসনে আর উনিশ শতকের মূল্যবোধহীন অধঃপতিত সমাজ, ইংরেজি শিক্ষিত যুবকসম্প্রদায়ের উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন এবং হিন্দু সমাজপতিদের ভণ্ডামি বর্ণিত হল, 'একেই কি বলে সভ্যতা'-য়। প্রহসন দুটিতে যে চলিত ভাষা ব্যবহার করলেন, তা পরবর্তী কালে অন্যান্য নাট্যকাররা অনুসরণ করতে লাগলেন।

১৮৬০ সালে রচনা করলেন দ্বিতীয় নাটক 'পদ্মাবতী ', এবং ঠিক পরের বছর রচিত হল  ‘কৃষ্ণকুমারী'। বিদগ্ধ জনের মতে কৃষ্ণকুমারী-ই তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এই নাটকটি কর্নেল উডের  ‘অ্যানালস অ্যান্ড অ্যানটিকস অফ রাজস্থান' গ্রন্থটি অবলম্বনে লিখেছিলেন। নাটকে বর্ণিত হয়েছে রাজ্যের কল্যানে পিতাকে বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে এক রাজপুত অনূড়া কন্যার আত্মবলিদান। অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এই নাটকটির প্রশংসায় তাঁর লিখিত বই, 'বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত'-তে বলেছেন, " রচনা,গ্রন্থনা,ঘটনা-সংঘাত ও সংলাপের দিক দিয়ে এ নাটক মাইকেলের নাট্যপ্রতিভার সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচয় বহন করছে, বাংলা নাটকের ইতিহাসেও এর স্থান খুব উচ্চে । "

মাইকেল স্বপ্ন দেখতেন, একদিন বাংলা নাটককে জমিদার বাগানবাড়ির নিছক বিনোদনের গন্ডি কেটে বের করে নিয়ে উৎকর্ষ সাহিত্য ও শিল্পের মেলবন্ধনে সাধারণ সাহিত্যপ্রেমী ও নাট্যপ্রেমী জনসাধারণের দরবারে পৌঁছে দেবেন। শুরু হল তাঁর নিরলস সংগ্রাম। নাটক যে শুধু বিনোদন নয়, এটিও শিল্পের একটি প্রকৃষ্ট মাধ্যম সেটা তাঁর প্রতিটি নাটকে প্রতিভাত হতে লাগল। সমাজের সামন্ততান্ত্রিক অমানবিক এবং পচনশীল সভ্যতার ভয়াবহ দিকটি বারবার তাঁর লেখা নাটক এবং প্রহসনে উঠে এসেছে। তাঁর রচিত 'মেঘনাথ বধ ' কাব্যে প্রথম শোনা যায় দেশপ্রেমের ডাক, যেখানে দশাননপুত্র মেঘনাদ বলছে, " জন্মভূমি রক্ষা হেতু কে ডরে মরিতে ? "

শুধু নাটক লেখাই নয়, নাটক পরিচালনা এবং সম্পাদনাকে উন্নত এবং আধুনিক করতে তাঁর চিন্তাভাবনা বাংলা নাটককে কালোত্তীর্ণ করেছে।তাঁরই প্রচেষ্টায় ১৮৭২ সালের ৬ই ডিসেম্বর প্রথমবারের জন্যে বাংলার মানুষ টিকিট কেটে সাধারণ রঙ্গালয়ে দেখলেন দীনবন্ধু মিত্রের নাটক 'নীলদর্পন '। তার পরের বছর আশুতোষ দেবের (ছাতুবাবু ) দৌহিত্র শরৎচন্দ্র ঘোষ ৯ নম্বর বিডন স্ট্রিটে প্রতিষ্ঠা করলেন কলকাতার প্রথম স্থায়ী নাট্যশালা ' বেঙ্গল থিয়েটার '। থিয়েটারের সার্বিক উন্নয়নের জন্য একটি উপদেষ্টামন্ডলী তৈরি হল, যেখানে বিদ্যাসাগর মহাশয় ছিলেন একজন সম্মানিত সদস্য। শরৎবাবু মধুসূদনকে অনুরোধ করলেন তাঁর থিয়েটারের জন্যে নাটক লিখে দিতে। মধুসূদন রাজি হলেন, তবে একটা শর্তে। শর্তটি হল, মহিলাদের চরিত্র মহিলা আর্টিস্টদের দিয়ে করাতে হবে। বিদ্যাসাগরসহ কমিটির অনেকেই এই শর্তের বিরোধিতা করলেন। শেষ পর্যন্ত মধুসূদনের শর্ত মানা হলে বিদ্যাসাগর মহাশয় বেঙ্গল থিয়েটারের সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করে কমিটি থেকে বেরিয়ে গেলেন। এর আগে স্ত্রী চরিত্রগুলো পুরুষ অভিনেতারাই করতেন। ১৭৯৫ সালে লেবেডফের থিয়েটারে আর ১৮৩৫ সালে শ্যামবাজারের নবীনচন্দ্র বসুর বাড়িতে যে শখের থিয়েটার হয়েছিল সেখানে স্ত্রী চরিত্রগুলিতে যদিও বারবনিতারা অভিনয় করেছিলেন।

শরৎচন্দ্রকে দেওয়া কথা রাখতে তিনি দুটি নাটক লিখতে শুরু করলেন- 'মায়াকানন' আর 'বিষ না ধনুরগুন'। কিন্তু তিনি তখন খুব অসুস্থ হয়। মায়াকানন শেষ করতে পারলেও জীবদ্দশায় অন্য নাটকটি শেষ হলনা। বাংলা নাটকের প্রাণপুরুষ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন। তাঁর পরামর্শে বাংলা নাটকে এক নতুন যুগের সূচনা ঘটলো, বেঙ্গল থিয়েটারের কর্ণধাররা তাঁদের থিয়েটারে চারজন অভিনেত্রী নিয়োগ করলেন। তাঁরা হলেন- জগত্তারিণী, গোলাপসুন্দরী, এলোকেশী আর শ্যামাসুন্দরী । তাঁর মৃত্যুর প্রায় দেড় মাস পর ১৮৭৩ সালের ১৬ই আগস্ট বেঙ্গল থিয়েটারের উদ্বোধন হল তাঁরই লেখা নাটক শর্মিষ্ঠার অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। এইদিন থেকেই বাংলার মহিলাদের জন্য থিয়েটারের দরজা খুলে গেল, যে বিপ্লবের অক্লান্ত সৈনিক হিসাবে মধুসূদন দত্তকে প্রনিপাত করতেই হবে।

থিয়েটারের দরজা খুলে যাওয়া এই সমস্ত অন্ধকার জগতের মহিলাদের জীবনে নব সূর্যোদয়ের সামিল। উনিশ শতকের বাংলা সমাজ সাক্ষি থেকেছে কদর্য বাবু সংস্কৃতির , যখন রক্ষিতা পোষণ এবং নিয়মিত বারাঙ্গনা গমন একটা স্ট্যাটাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। পঙ্কিল পরিবেশে বেড়ে ওঠা এই মহিলাদের একমাত্র পরিচয় ছিল, নষ্ট মেয়েছেলে। মধুসূদন এই পিতৃ-পরিচয়হীন মহিলাদের জীবনে অভিনয়ের আলোর সন্ধান দিয়েছিলেন, সমাজের মুলস্রোতে একটু অন্যভাবে, একটু সম্মানের সাথে নিজেদের প্রয়োগ করার রাস্তা চিনিয়েছিলেন। আর সেই সমাজসংস্কারকের সারা জীবনই কাটলো চরম দারিদ্রের মধ্যে; পারিবারিক জীবনও তাঁর সুখের হয়নি। জীবনের শেষ কতা দিন কাটাতে হল আত্মীয়-বন্ধুহীন এক গ্রন্থাগার কক্ষে, তারপর দাতব্য চিকিৎসালয়ে। এমনই দুর্ভাগ্য মৃত্যুর পর পনের বছর সময় লেগেছিল তার সমাধিস্থল পাকা গাঁথুনি দিয়ে সাজাতে আর মার্বেল ফলকে লেখা রইল তাঁরই রচিত কয়টি লাইন-

" দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব

  বঙ্গে ! তিষ্ঠ ক্ষণকাল ! এ সমাধি স্থলে 

 (জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি 

 বিরাম) মহীর পদে মহানিদ্রাবৃত

দত্ত কুলোদ্ভব, কবি শ্রীমধুসূদন !

যশোরে সাগরদাঁড়ি কপোতাক্ষ-তীরে

জন্মভূমি, জন্মদাতা দত্ত মহামতি 

রাজনারায়ণ নামে, জননী জাহ্নবী।"

 

তথ্যঋণ : ইন্টারনেট

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ