সর্বশেষ

10/সর্বশেষ/ticker-posts

জীবনের গল্প - চাকরী



লেখা-পলাশ আহমেদ

সাকিব বসে আছে ধানমন্ডি লেকের পাড়ে। কিছুক্ষণ হলো সে এখানে এসেছে।লেকের পরিবেশ এত মনোরম, কোলাহলবিহীন সারাদিন বসে থাকতে ইচ্ছে করে। হঠাৎ সাকিবের কানে আজানের ধ্বনি এলো। সে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো ১ টা বাজে। মসজিদে জোহরের আযান হচ্ছে। সাকিবকে আজ বেশ ফিটফাট লাগছে। ফরমাল শার্ট, প্যান্ট আর জুতোয় তাকে ভালোই মানিয়েছে। ইতিমধ্যে আযান শেষ।পাশেই একটা লোক ফ্লাক্সে করে চা বিক্রি করে। মামা চিনি বেশি দিয়ে এক কাপ চা দেন তো আর একটু আদাও দিয়েন, সাকিব বলল। সকালে নাস্তার পর সাকিবের চা আবশ্যকীয়। কিন্তুু আজ সে সকালে নাস্তাই করে নি। নাস্তা করেছে কিছুক্ষণ আগে।

 কিছুদিন আগে একটা কর্পোরেট অফিসে সিভি পাঠিয়েছিল সে। আজ সেখান থেকে তাকে ইন্টার্ভিউর  জন্য ডাকা হয়েছে। ১০ টায় ইন্টার্ভিউ  ছিলো। ঘুম থেকে টাইমলি উঠতে না পারার কারণে নাস্তা না করেই বেরিয়ে পড়েছিল। ইন্টার্ভিউ শেষ করে রাস্তার পাশের একটা হোটেল থেকে কিছু একটা খেয়ে নিয়েছে। তারপর হাঁটতে হাঁটতে লেকের পাড়ে চলে এসেছে। চা ওয়ালা মামা চা দিয়ে গেছে। সাকিব চায়ে চুমুক দিলো। চা টা খুব ভালো হয়েছে, নিজেই বিড়বিড় করে বলল।সাকিব আজ অনেক খুশি। সে ভাবছে আজই তার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন। এতোদিন শুধু এই দিনটির জন্যই সে অপেক্ষা করেছিল। 'রাত যত গভীর হয় প্রভাত তত নিকটে আসে' ঠিক তেমনিভাবে সাকিবের জীবনের দুঃখ কষ্ট গুলোও এতদিন পর আজ নিঃশেষ হলো। সাকিবের চাকরি হয়েছে। কিছুক্ষণ আগে সে যেখানে ইন্টার্ভিউ দিয়ে এসেছে সেখানে তার চাকরি হয়েছে। বেশ ভালো স্যালারি। জয়েনিং লেটার সাথে সাথেই দিয়ে দিয়েছে। অবশ্য গত একবছর এর জন্য তাকেই অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। কম করে হলেও প্রতি মাসে ২ টা করে চাকরির ইন্টার্ভিউ দিয়েছে। কিন্তুু ভাগ্য সহায় হয় নি। 

চায়ে চুমুক দিতে দিতে সে ভাবছে - একটা চাকরি, শুধুমাত্র একটা চাকরি মানুষের জীবনে কতটা  প্রয়জনীয়। এই সমাজ চাকরি ছাড়া কিছুই বোঝে না। এখানে মানুষকে জাজ করা হয় চাকরির মাধ্যমে, মেধার মূল্যায়ন করা হয় চাকরি দিয়ে। কিন্তুু প্রকৃতপক্ষে চাকরির বাজারে মেধার কতটা মূল্যায়ন করা হয় সেটা কারো অজানা নয়। শুধুমাত্র একটা চাকরি না পাওয়ার কারণে কতই না ঝড় ঋাপটা বয়ে গেছে তাঁর উপর দিয়ে সেটা কেউই জানে না।
 একমাত্র উপরওয়ালা আর সে নিজে জানে।আর কেউ না। কিছু কিছু মানুষ আছে, এদের জীবনে যতই দুঃখ-কষ্ট, সমস্যা থাকুক এরা কাউকে বুঝতে দেয় না। সবকিছুর পরেও হাসিমুখে বলে ভালো আছি। সাকিব ঠিক এমনই একজন মানুষ। কাউকে কিছু বুঝতে দেয় না। 

এই মুহুর্তে সাকিবের একজনকে খুব মনে পড়ছে। যাকে সে অসম্ভব ভালবাসে এবং সারাজীবন ভালবেসে যাবে। কিন্তুু সেই মানুষটি সাকিবের পাশে আর নেই। প্রায় দেড় বছর হয়ে গেছে তাদের বিচ্ছেদের। মেয়েটির নাম ছিল তানিশা। ৪ বছরের রিলেশন ছিল তাদের।একদিকে সাকিব চাকরি খুজছিল আর অন্যদিকে তানিশার বাসায় বিয়ের প্রেসার। মধ্যবিত্ত ছেলেদের অনেক কিছু ভাবতে হয়, মাথায় অনেক দায়িত্ব থাকে, সাকিবেরও ছিল।হুট করে তারা কিছু করতে পারে নি। তাই সে তানিশাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলেছিল। কিন্তুু সে করেনি।ছেলে ব্যাংক কর্মকর্তা। ঢাকায় নিজের বাড়ি আছে। আর কি চাই। খুব বেশি পিড়াপিড়ি করতে হয় নি তাকে রাজি করাতে। শেষ যেদিন তানিশা সাকিবের সাথে দেখা করতে এসেছিল সেদিন তানিশার গায়ে হলুদ ছিল। একটা বিয়ের কার্ড হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল পারলে এসো আমার বিয়েতে, খুশি হবো। সাকিবের দুচোখ তখন পানিতে টলমল করছিল। একটু হলেই যেন শ্রাবণের বর্ষণের মতো চোখের পানি অঝোর ধারায় ঝরবে। ছেলেরা কাঁদে আড়ালে, নিশ্চুপে, নির্জনে। সাকিব ও চোখের পানি ধরে রেখে বলল - পারলে অবশ্যই আসবো। আমার কিছুই করার ছিলো না, আমি পরিস্থিতির শিকার এই বলে দায় এরিয়ে তানিশা চলে গেলো। যে মানুষটি একদিন হাতে হাত রেখে বলেছিল - আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না তো?  আজ সেই মানুষটিই সব বাঁধন ছেড়ে- ছুড়ে চলে গেছে। জীবন টা নাটক সিনেমা কিংবা উপন্যাসের না। এখানে ঝুমবৃষ্টি হয়,কালবৈশাখী ঝড় হয়, উথালপাতাল ঢেউ হয়... শুধুমাত্র দুটো মানুষের একসাথে হাঁটা হয় না!!

হঠাৎ করে এসব কথা মনে পড়ায় সাকিবের চোখে দুফোটা জল জমেছে।অতীতে হারিয়ে গিয়ে কখন চায়ের কাপ খালি হয়েছে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। চা খাওয়া কি শেষ হয়েছে? হঠাৎ চা ওয়ালা মামার কথায় তার ঘোর কাটে।হ্যাঁ, হয়েছে,সাকিব বলে। চায়ের কাপের সাথে চায়ের দামটা দিয়ে ফাইল হাতে নিয়ে উঠে পড়ল সে। মাকে ফোন করে খুশির খবরটা দিতে হবে। দু-চার মাসের মধ্যে সবকিছু গুছগাছ করে বোনকে বিয়ে দিতে হবে। তারপর মাকে ঢাকায় নিয়ে আসবে। এখন আর পিছনে ফিরে তাকাবার সময় নেই। কারো কথা ভাবারও সময় নেই।এখন শুধুই সামনে অগ্রসর হতে হবে।  কে কার সাথে আছে, কোথায় আছে.. সেটা জরুরি না। জরুরি হলো ভালো থাকা। তানিশা ভালো আছে, ভালো থাকুক। ভাল থাকুক ভালবাসা। 

(সাকিবও ভাল থাকুক নিজেকে নিয়ে, ফ্যামিলিকে নিয়ে।)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ