সর্বশেষ

10/সর্বশেষ/ticker-posts

গল্প- আকাশ কত দূরে

 


জোবায়ের রাজু 


জিনিয়াদের আলিশান এই রাজমহলের মত বাড়িতে হোসেন সাহেবের সামনে এভাবে বসে থাকতে বড় অস্বস্তি লাগছে জুয়েলের। জিনিয়ার উপর তার বড্ড রাগ হচ্ছে। মেয়েটা বাবার সাথে প্রাণ খুলে কথা বলার জন্যে এভাবে তাকে রেখে ভিতরে চলে যাবে, ভাবতেই পারছে না জুয়েল।মনে মনে সে জিনিয়ার আগমন প্রত্যাশা করছে। 

‘তোমার বাবা কি করেন?’ হোসেন সাহেবের নিচু গলার প্রশ্নে জুয়েল ম্লাণ কণ্ঠে বলল ‘আব্বা জমিনে বর্গা দেন। আমাদের বড় বড় দুটি গরুও আছে। ছোট ভাই বাড়ি বাড়ি দুধ দিয়ে আসে।’ জুয়েলের কথা শোনে হোসেন সাহেবের রাগে গা ঘ্যান ঘ্যান করে উঠলো। তার মা মরা মেয়েটা একজন চাষার ছেলের সাথে সম্পর্ক পাতবে, আশা করেননি তিনি। এই ছেলে কখনো জিনিয়ার যোগ্য না। তবে ছেলেটি দেখতে ভালো, বলতেই হবে। কিন্তু রুপ সুরত দিয়ে কি হবে! মেয়েকে তিনি ওই অভাবের সংসারে পাঠাবেন না। ইমরানই হচ্ছে জিনিয়ার উপযুক্ত। 


ঢাকা শহরে তোমাদের কয়টা বাড়ি আছে?

-নেই।

গ্রামে জমি জমা কেমন?

-তেমন নেই। তবে মা জন্মসূত্রে নানা বাড়ির কিছু সম্পত্তি পাবেন। 

রাগে হোসেন সাহেবের গা আবারও ঘ্যান ঘ্যান করে উঠলো। কি দেখে মেয়ে তার এই ছেলের জন্য পাগল হয়! না, তিনি বন্ধুর ছেলে ইমরানের সাথেই জিনিয়ার বিয়ে দিবেন। 

তুমি আমার কিছু কথা রাখবে?

-বলুন আংকেল।

জিনিয়ার জীবন থেকে তুমি সরে যাও। তুমি জিনিয়ার যোগ্য নও। আবেগে আমার মেয়ে ভুল করতে পারলেও আমি তো পারি না। সন্তান ভুল করলে বাবারা তা শুদ্ধ করে দেয়। আমার মা মরা মেয়ে তোমাদের অভাবের সংসারে কখনো সুখি হবে না। ছোটবেলা থেকে সে আয়েসে বড় হয়েছে। 

-ইয়ে মানে আংকেল...। 

আমার বন্ধুর ছেলে ইমরানের সাথে আগামি মাসে জিনিয়ার বিয়ে ফাইনাল করবো। তোমাকে একটা খারাপ কাজ করতে হবে।

-খারাপ কাজ?

হ্যাঁ। তুমি জিনিয়াকে বলবে তার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেছো। 

জুয়েলের মাথায় যেনো বাজ পড়ে। এমন পরিস্থিতি তার কাম্য ছিল না। জিনিয়ার অনুরোধেই সে আজ এখানে এসেছে। বাবা নাকি তার পছন্দের ছেলেকে দেখতে চেয়েছেন। কিন্তু হোসেন সাহেবকে তাকে রীতিমত অপমান করেছেন। 

তুমি এখান থেকে চলে যাও। জিনিয়া এসে যেনো তোমাকে না দেখে।

আমি কি জিনিয়ার সাথে একটু কথা বলতে পারি?

নো। আমি চাই তুমি এখনই বিদায় হও। জিনিয়া জানবে তুমি তার সাথে প্রেমের অভিনয় করেছো। 


২.

একেলা পথে হাঁটছে জুয়েল। জিনিয়ার বাবা তাকে অপমান করেছেন সুক্ষ্নভাবে। কঠিন বাস্তবতা জুয়েলের সামনে এসে দাঁড়ালো। বড়লোকের এই মেয়ে আসলেই তার যোগ্য নয়। এই সমাজে ধনী গরীবের আলাদা আলাদা ভাগ আছে। 

জুয়েলের ফোনে কল আসে জিনিয়ার। রিসিভ করতে ইচ্ছে করছে না। লাইন কেটে যায়। জিনিয়া আবার ব্যাক করে। রিসিভ করে জুয়েল। 

ট্রে ভর্তি নাস্তা নিয়ে এসে দেখি তুমি নেই। অভদ্রের মত চলে গেলে কেনো?

ভালো লাগছিল না।

তাই বলে এভাবে না বলে চলে যাবে? তুমি একটা খারাপ ছেলে।

আর কিছু বলবে?

 বলবো।

বলো?

আমি এই খারাপ ছেলেকে ছাড়া বাঁচবো না। হা হা হা। 

ওপার থেকে জিনিয়ার বাঁধ ভাঙা হাসি জুয়েলের কানে বাজছে। এই মেয়ের সাথে একটা খারাপ কাজ করতে হবে। বলতে হবে সে এতোদিন যা করেছে, সব মিথ্যে অভিনয়। 

হু হু করে এক ফালি মাতাল বাতাস বয়ে গেল। ভিজে আসা চোখে আকাশের দিকে তাকায় জুয়েল। আকাশে এক টুকরো নীল মেঘ। বড় ভালো লাগছে। ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে ওই নীল মেঘ। কিন্তু জুয়েল সেটা কখনোই ছুঁতে পারবে না। আকাশ যে কত দূরে। তাকে ছোঁয়া যায় না। 


আমিশাপাড়া, নোয়াখালী। 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ