সর্বশেষ

10/সর্বশেষ/ticker-posts

ভ্রমণ গল্প- লাল পাহাড়ের দেশে: পর্ব-১

ডঃ গৌতম সরকার


তখন সবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শেষ হয়েছে, ভবিষ্যৎ চিন্তার জোয়াল সেভাবে কাঁধে চেপে বসতে পারেনি, কিন্তু ফুটো পকেটের ফতো মাস্তানের মতো বেড়ানোর ফক্কিকারি মাথায় কি করে যেন চেপে বসেছে ! ওই সময় বেড়ানো বলতে আমাদের দৌড় ছিল বিহার, অধুনা ঝাড়খন্ড -সস্তায় পুষ্টিকর ভ্রমণ৷ 

সালটা ১৯৯১-৯২ হবে, আমি-দিদি-আর আমার বন্ধু পবিত্র কলকাতার বাসায় থাকি, আমার হাতেগোনা কয়েকটা টিউশন আর দিদির ইনকামের টাকায় আমাদের চলে৷ পবিত্র তখন রবীন্দ্রভারতীতে এম.এ করছে, বাড়ি থেকে কোনো সাহায্য পায়না ; কি এক অদ্ভূত সমীকরণে দিদি তার দুই ভাইকে প্রতিপালন করতো, এখন ভাবলে অবাক লাগে৷ আমার দিদি দৈনন্দিন উপার্জনের টাকা (সরকারি নার্সের চাকরি পাবার আগে কলকাতায় সি.এম.আর.আই-তে চাকরি করতো ) আর আমি মাসকাবারি টিউশনের সামান্য টাকা ঘরের একমাত্র আসবাব দেওয়াল আলমারিতে রাখা একটা স্টিলের বাটিতে রাখতাম, আর আমরা তিনজন নিজেদের প্রয়োজন মতো টাকা ঐ বাটি থেকে নিয়ে রোজকার কাজে বেরিয়ে পড়তাম ; এরকম সাম্যবাদী সহাবস্হান আমার জীবনে আর কখনোও ঘটার সুযোগ হয়নি৷ এরকম এক মাহেন্দ্রক্ষণে আমি আর পবিত্র ঠিক করলাম বেড়াতে যাব- তোপচাঁচি লেক আর নেতারহাট৷ সেই সময়ে যেমন হাতের কাছে কোনো ভ্রমণ পত্রিকা ছিলনা তেমনি ইন্টারনেটের যুগও সেটা নয় ; তাই সার্বিক ভূগোল সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও মার্চের এক দহন-দগ্ধ সন্ধ্যায় দুজনে বেরিয়ে পড়লাম৷ বাঘাযতীন থেকে পাঁচ নম্বর সরকারি বাস ধরে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে গেলাম৷

 




তোপচাঁচি যেতে গেলে নামতে হয় গোমো স্টেশনে, ধানবাদের কয়েকটা স্টেশন পর৷ এখানে যাবার সবথেকে কম খরচার ট্রেন হল ‘মোকাম্বা প্যাসেঞ্জার’;  হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে জেনারেল কম্পার্টমেন্টের দুটো টিকিট কেটে নিলাম৷ সময়টা ছিল দোলের কয়েকদিন আগে, বাংলা থেকে লাখো লাখো বিহারী হোলিতে বাড়ি ফিরছে, ফলে জেনারেল কম্পার্টমেন্টে দুটো সিট পেতে যাত্রী এবং কুলিদের সঙ্গে রীতিমতো মারামারি করতে হল৷ তখন অখণ্ড যৌবন, কাড়াকাড়ি-মারামারি জীবনের শিরা- উপশিরায় বাড়তি অ্যাড্রিনালিন সরবরাহ করতো, পেয়ে গেলাম পছন্দ মতো জানালার ধারে দুটো জায়গা৷ নিজেদের জায়গার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে কিছুটা সময় গেল, এরপর রাতের খাবার আর জলের ব্যবস্থা করতে পবিত্রকে পাঠালাম কারন ওর মত ভালো মানুষ বহু কষ্টে যোগাড় করা এই সিট টিকিয়ে রাখতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে৷ খাবার মানে তো কয়েকটা রুটি আর একটু তরকারি আর তার সাথে স্টেশনের কলের জল৷ কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেল পবিত্র গেছে এখনও তার আসার পাত্তা নেই, এদিকে ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে যাচ্ছে৷ স্বাভাবিকভাবেই আমি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছি ; ট্রেন ছাড়ার প্রথম ঘন্টাও পড়ে গেলো৷ পবিত্রর এই ক্যাজুয়াল স্বভাবের কারণে সবসময় কিছুনা কিছু সমস্যা তৈরি হয়৷ আমার রাগ বাড়তে থাকে, অগত্যা সিটের মায়া ত্যাগ করে গেটে গিয়ে উদ্বিগ্ন তাকিয়ে থাকি, বেশ কিছুক্ষণ পরে উনি এসে হাজির হলেন সঙ্গে এক ভদ্রলোককে নিয়ে৷

 ট্রেন ছাড়ার ঘন ঘন হর্নের মধ্যে ওরা দুজনে মিলে কি বলতে চাইছে আমার কিছুই বোধগম্য হচ্ছেনা ; পবিত্র বারবার এই কম্পার্টমেন্ট থেকে নেমে পাশের কম্পার্টমেন্টে যেতে ইশারা করছে ; আমার তো মাথায় কিছু ঢুকছে না -- কেন যাবো ? এত কষ্টে যোগাড় করা জানলার পাশের সিট ছেড়ে যেতে যাবো কেন? পবিত্রর সঙ্গে রীতিমতো তর্কাতর্কি শুরু হয়ে গেলো ; এবার সঙ্গী ভদ্রলোক প্লাটফর্ম ছেড়ে আমাদের বগিতে উঠে এলেন, আগে আমাকে আশ্বস্ত করলেন ট্রেন ছাড়তে এখনো দশ মিনিট দেরী আছে, এবার উনি নিজের কথা বলতে শুরু করলেন – “দেখুন আমরা এই ট্রেনের ডেইলি প্যাসেঞ্জার, আসানসোল থেকে সপ্তাহে তিনদিন আসি আর তিনদিন ফিরি; পাশের কম্পার্টমেন্টটা হল স্লিপার ক্লাস, কিন্তু এই ট্রেনে রিজার্ভেশন প্রায় হয়না বললেই চলে, তাই আমাদের মতো ডেইলি প্যাসেঞ্জাররা ওই কম্পার্টমেন্টে ঘুমোতে ঘুমোতে যাতায়াত করি৷ কিন্তু মুশকিল হল প্যাসেঞ্জার এত অল্প থাকে যে রাত্রে জার্নি করতে খুব ভয় লাগে, প্রতি রাত্রেই আমরা এভাবে দুচারজন সহযাত্রী যোগাড় করি৷” সেই কারণে আজ জল নিয়ে ফেরার পথে পবিত্রকে পাকড়াও করেছেন৷ আমি বললাম, "কিন্তু আমাদের তো জেনারেল ক্লাসের টিকিট, ওই বগিতে চড়ব কি করে?" ভদ্রলোক সেকথা শুনে একবার চারদিকে চেয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বললেন, -“ওটা আমার ওপর ছেড়ে দিন” - একটু দোনোমোনো করে রাজি হয়ে গেলাম৷ এই ভিড়েঠাসা কম্পার্টমেন্টে গাদাগাদি করে সারারাত বসে ঢুলতে ঢুলতে যাবার চেয়ে একটা গোটা গদিয়াল বার্থে নিজেকে সম্পূর্ণ ফেলে-ছড়িয়ে ঘুমোতে ঘুমোতে যাবার প্রলোভন ছাড়তে ইচ্ছা করলো না, আর পবিত্র তো একপা বাড়িয়েই আছে৷  আর কেন কি জানি ভদ্রলোককেও অবিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছিল না ; আমাদের চেয়ে বয়সে অনেকটা বড়, সৌম্য, স্মার্ট, শিক্ষিত এক মানুষ বলেই মনে হল৷ তাই যৎসামান্য তল্পিতল্পা গুটিয়ে জেনারেল বগি থেকে নেমে স্লিপার বগির পানে ধাওয়া দিলাম৷ 


  দৌড়ে পাশের বগিতে গিয়ে উঠতেই ট্রেন ছেড়ে দিল, সত্যি এই বগিতে জনাকয়েক প্যাসেঞ্জার ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে, আমরা যে কুপটায় ঢুকলাম সেখানে আর কেউ নেই৷ মুখোমুখি বসে পড়লাম, আমার মন থেকে শঙ্কা তখনো পুরোপুরি দূর হয়নি৷ ভদ্রলোক বোধহয় বুঝতে পারলেন, আমাদের আশ্বস্ত করে বললেন -আরে চিন্তার কিছু নেই, রাত্রে টিকিট চেকার আসবে, পাঁচটা টাকা হাতে দিয়ে দেবেন, কিছু বলবেনা, চলে যাবে ......অগত্যা৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই ভদ্রলোক শোবার তোড়জোড় শুরু করলেন আর শোবার আগে বললেন -আপনাদের হয়ে গেলে আলোটা নিভিয়ে দেবেন ...অর্থাৎ ...আপনারাও দেরী না করে শুয়ে পড়ুন৷ একটু মনঃক্ষুণ্ন হলাম --আরে আমরা বেড়াতে যাচ্ছি তাও আবার এই আরামের সিটে চড়ে, যা আমাদের সাধ্যাতীত তো বটেই আবার কল্পনাতীতও, তাই একটু আড্ডা মারবো, হইহই করবো, ট্রেনের দুলুনিতে সিটের ওপর পা তুলে বাবু হয়ে বসে রাতের খাবার খাবো, তবে না বেড়াতে যাবার মজা, বেড়ানোর টিউনটা তো ট্রেন জার্নিতেই তৈরী হয়ে যায় -আর সেসব না করে খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ব ! কিন্তু কিছুই করা হলনা, খাওয়া সেরে শোয়াই মনস্থ করলাম, ভদ্রলোক ইতিমধ্যে অঘোরে ঘুমিয়ে পড়েছেন, খুব খারাপ লাগলো -এভাবেই এনাদের সপ্তাহে ছটা রাত্রে ঘুমাতে হয়৷ তাই তাড়াতাড়ি করে আলো নিভিয়ে আমি ওপরে উঠে গেলাম, পবিত্র অন্য লোয়ার টায়ারটায় শুয়ে গেলো৷

 

  রাত্রে ট্রেনে তখন আমার দারুণ ঘুম হতো -পাগলের মতো উল্টেপাল্টে ঘুমোতাম, বোধহয় ট্রেনের মৃদু দুলুনিতে ছোটোবেলার সেই দোলনার দোদুল স্পর্শ পেতাম বা মায়ের কোলের সেই অপার্থিব দোলনের তৃপ্তি৷ এবারেও ব্যাতিক্রম হলনা, মাঝরাত্রে পিঠে একবার খোঁচা খেয়ে কাঁচা ঘুম ভেঙেছিল, আধো অন্ধকারে কালো কোট পরা মূর্তি দেখেই ভদ্রলোকের কথা মনে পড়েছিলো ; পাঁচটাকা পকেটে নিয়েই শুয়েছিলাম, আধো ঘুমে টাকাটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে আবার পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম৷ ঘুমটা যখন ভাঙলো তখন ট্রেনের মধ্যে বেশ আলো ঢুকে পড়েছে, ওপর থেকে মুখ বাড়িয়ে মনে হল ট্রেনটা কোনো একটা স্টেশনে থেমে আছে৷ নীচের বার্থ খালি, কালকের ভদ্রলোককে কোথাও দেখতে পেলামনা, বোধহয় নেমে গেছেন৷ ধড়মড় করে উঠে বসি --আরে ওনার তো আসানসোলে নামার কথা ! কতক্ষণ আগে নেমেছেন ! আসানসোলের কিছু পরেই ধানবাদ আর তারপরেই তো গোমো৷ চলে গেলো নাতো ! মারলুম ঝাঁপ ওপর থেকে, পবিত্রর হেলদোল নেই, নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমোচ্ছে, জগৎসংসার রসাতলে গেলেও ওর কিছু যায় আসেনা৷ সিটে বসে জানলা দিয়ে স্টেশনটার নাম দেখার চেষ্টা করলাম, সামনে একটা প্যাসেঞ্জার ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে, নাম দেখা যাচ্ছেনা, অন্যদিকের জানলা বন্ধ করে সাইড লোয়ারে একজন ঘুমোচ্ছে৷ ঘড়িতে সাতটা বাজে, কিছুক্ষণ পর সামনের ট্রেনটা চলে যেতে অবাক বিষ্ময়ে দেখলাম জ্বলজ্বল অক্ষরে স্টেশনের নাম লেখা আছে - 'আসানসোল'I ভ্রমণ ও ভূগোল সম্বন্ধে তখন আহা মরি জ্ঞান না থাকা সত্বেও একটা অঙ্ক কিছুতেই মেলাতে পারলামনা - একটা ট্রেন রাত নটায় হাওড়া ছেড়ে সকাল সাতটায় আসানসোল আসে কিভাবে !

    বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর ট্রেন গড়াতে শুরু করলো, আমি বাথরুমের দিকে হাঁটা দিলাম৷ ফিরে অনেক কসরত করে পবিত্রর ঘুম ভাঙালাম, এরপর দুজনে মিলে এককাপ করে চা নিয়ে জানালার ধারে পা তুলে জমিয়ে বসলাম৷ আস্তে আস্তে আড্ডা জমে উঠলো, গতকাল রাতের ভেস্তে যাওয়া আড্ডা সুদে আসলে উশুল করতে লাগলাম ; ট্রেনের শম্বুক গতির সাথে তাল মিলিয়ে চায়ের চুমুকে চুমুকে আমাদের আড্ডা জমে উঠলো৷ ইতিমধ্যে বাইরের প্রকৃতির রুপ বদলাতে শুরু করেছে, মাটির রঙ বদলে গেছে, গাছগাছালির পটপরিবর্তন হয়েছে, দুদিকে দিগন্ত বিস্তৃত অকর্ষিত রুক্ষ্ম বন্ধ্যা জমি নিশ্চুপ পড়ে আছে, দূরে দিগন্তের কাছাকাছি পাহাড়ের হালকা হাতছানি চোখে পড়ছে ; লোকাল স্টেশনের প্লাটফর্মগুলো মাটি ছুঁয়ে, সিঁড়ি বেয়ে নামতে হয় রাঙা মাটি ধোয়া তকতকে নিকানো উঠোনে৷ কলকাতার হই-হট্টগোল থেকে পালিয়ে আসা দুই তরুণ তাদের দুজোড়া চোখ অবাক -বিষ্ময়ে জানালার গরাদে সেঁটে ধরেছে৷ গল্পের সাথে সাথে প্রকৃতি দর্শন চলতে থাকলো, এখন গোটা বগিতে শুধু আমরা দুজন৷ সারা কম্পার্টমেন্ট জুড়ে একবার এই জানালার একবার ওই জানালার সৌন্দর্য্য নিতে নিতে বেলা প্রায় এগারোটা নাগাদ আমাদের গন্তব্যে পৌঁছলাম৷

  আমাদের স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে টুক করে ট্রেনটি চলে গেল৷ গোমো স্টেশনের এখন নাম হয়েছে -নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস জংশন ; বেশ বড় ঝকঝকে স্টেশন, তখন কিন্তু শান্ত, ছোট্ট একটা আধাপাহাড়ি স্টেশন ছিল৷ গোমোতে আমরা কোনো এক সরকারি রিসর্টে ছিলাম, স্টেট গভর্নমেন্ট না ফরেস্টের মনে পড়ছেনা, তবে স্টেশন থেকে বেশ কিছুটা দূরে ছিল, একটা অটো নিয়ে পৌঁছেছিলাম৷ তাই স্টেশনে নেমে একটু জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হয়ে পড়ল৷ কিন্তু প্লাটফর্মে নেমেই পবিত্রর মুখচোখ দেখলাম অন্যরকম, আমি যখন লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করছি আমাদের আস্তানায় পৌঁছবার পথনির্দেশ, ও তখন করুন মুখে আমাকে জিজ্ঞাসা করছে আস্তানা কতদূর, কতক্ষন সময় লাগবে, ইত্যাদি৷ যখন বুঝলো পৌঁছতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগবে তখন মুহূর্তের মধ্যে আমাকে কিছু বোঝার সুযোগ না দিয়ে মারলো এক লাফ প্লাটফর্মের উল্টোদিকে, তারপর ঢালু ঢাল ধরে গড়গড় করে গাছপালার মধ্যে কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেলো৷ আমি তো হতবাক- কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো ব্যাপারটা বুঝতে, বেচারী সকালের আবশ্যকীয় কাজকর্ম ট্রেনে সেরে আসেনি৷ অগত্যা প্লাটফর্মের এক প্রান্তে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম৷


 থাকার জায়গাটার স্মৃতি এতো বছর বাদে খুব পরিষ্কার নয়, তবে এটুকু মনে আছে বেশ গাছপালা ঘেরা একটা জায়গা, মাত্র কয়েকটা ঘর নিয়ে ট্যুরিস্ট লজটা ছিল, আর যতদূর মনে করতে পারছি এখানে দুটো রাত ছিলাম আর কোনো ট্যুরিস্ট এই জনবিরল, স্বল্পপরিচিত এবং কম আকর্ষণীয় জায়গায় ছিলনা৷ ট্যুরিস্ট বাংলোর স্মৃতি সেভাবে ধরা না দিলেও, যে জায়গাটির টান বা আকর্ষণে এখানে এসেছিলাম তার কথা বেশ মনে আছে৷ তোপচাঁচি লেক ট্যুরিস্টস্পট হিসেবে মোটেই পপুলার ছিলনা, কিন্তু এই লেকের অনবদ্য অবস্থান আপনাকে মুগ্ধ করবে৷ তবে এখন কি অবস্থা জানিনা- প্রায় তিরিশ বছর আগে লাল মাটির বুকে স্লেট কালারের ছোটো ছোটো টিলার প্রেক্ষাপটে ঘন সবুজ জলের এই লেক বহু বাংলা সিনেমার শুটিংয়ের সাক্ষ্য থেকেছে ; লেকের বুকে খুব সুন্দর ছোটো এক ব্রিজের কথা এখনও মনে আছে৷ আমাদের হোটেল থেকে পলাশ -শিমুল ছাওয়া সুন্দর এক পথ ধরে লেকে পৌঁছতাম, তখন হোলির সময়, শিমুল-পলাশের আগুণ লেগেছে গোটা অঞ্চল জুড়ে, মহুয়ার মাতাল গন্ধে নাকি মাঝেমধ্যে এই এলাকায় ভালুকেরও পদধূলি পড়ে৷ তখন আমাদের অভিজ্ঞতা বলতে গ্রামবাংলার নিসর্গ আর কলকাতা শহরের ধোঁয়া -ধুলো, গাড়িঘোড়া -হইহট্টগোলের সার্বিক দূষণ ; সেইরকম নবীন দুই জোড়া চোখের সামনে এই নৈসর্গিক দৃশ্য অপার্থিব এক স্বপ্ন সাজিয়ে তুললো৷ সকাল থেকে সন্ধ্যে পুরো সময়টা লেকের সাথে সময় কাটিয়ে বেশ কিছুটা রাত করেই অন্ধকার পথ পেরিয়ে হোটেলে ফিরলাম৷ পরের দিন ভেবেছি হাজারিবাগ -রাঁচি হয়ে নেতারহাটে যত তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাওয়া যায়৷

                                                          (ক্রমশঃ…….)


ঋণস্বীকার: ছবিগুলি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ