সর্বশেষ

    Loading......

ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর [ পর্ব-০৯]



স্লিপটা পাঠিয়ে সৈকত ওয়েটিং রুমে বসে আছে। পাশে আরও কয়েকজন বসে আছেন। এক ভদ্রলোক বসে আছেন। আরেক ভদ্রলোক স্ত্রী এবং বাচ্চাসহ অপেক্ষায় আছেন। প্রথম ভদ্রলোকটি সৈকতকে বারবার আড়চোখে তাকিয়ে দেখছে। সৈকত বেশ বিব্রতবোধ করছে। একবার ভাবল উঠে বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করবে। কিন্তু সৈকতের উঠা একদম ভালো লাগে না। কেমন অবলা অবলা মনে হয় নিজেকে। সৈকত চুপচাপ বসে আছে। কারও দিকে তাকেচ্ছে না। গন্তব্যহীন দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে শুধু। গন্তব্যহীন দৃষ্টিতে এদিক- ওদিক তাকাচ্ছে অথবা তাকিয়ে আছে একদিকে আর মনটা পড়ে আছে অন্য কোথাও।

হঠাৎ বাইরে তাকাতেই রুচিরাকে দেখতে পেল। রুচিরা গেস্ট রুমের দিকেই এগিয়ে আসছে। সৈকত উঠে রুমের বাইরে চলে আসে। তারপর ওরা হল গেটের বাইরে বেরিয়ে আসে।

রুচিরা হালকা সাজগোজ করে এসেছে। সৈকত তাকিয়ে দেখছে রুচিরাকে আর মিটিমিটি হাসছে।

রুচিরা জিজ্ঞেস না করে পারল না- কী ব্যাপার! অমনভাবে তাকিয়ে দেখছটা কী? 

আপনাকে।

আমাকে ওভাবে দেখার কী আছে?

দেখছি আপনি ইদানীং কিছুটা সাজগোজ করেন।

করতে হয়, তাই।

করতে হয় মানে!

অফিসের হালকা অর্ডার।

সাজলে আপনাকে বেশ লাগে। কথাটা বলে সৈকত অন্যদিকে তাকায়। রুচিরা কোন কথা বলে না। মুচকি মুচকি হাসে।

সৈকত প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলে আপনার কাছে এসেছি একটা বিশেষ কাজে। আপনার কি বিশেষ কোন কাজ আছে এখন।

আপাতত নেই। তাছাড়া আমি অফিসে যাওয়ার প্রস্ততি নিয়েই বেরিয়েছি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রুচিরা আবার বলে এখন মাত্র এগারোটা বাজে। হাতে অনেক সময়। অবশ্য তোমার কাজটা শেষে লাইব্রেরিতে ঢুকব। লাইব্রেরি থেকে অফিসে যাব।

রুচিরাকে নিয়ে সৈকত পাবলিক লাইব্রেরিতে এল। তারপর সৈকত বলল রুচিদি, পারমিতার ওখানে ফোন করতে হবে।

অবাক হয়ে রুচিরা বলে এর জন্যই কি আমাকে এনেছ?

গতকাল জরুরি তলবে পারমিতা বাসায় গিয়েছে। আমাকে নিষেধ করে গেছে যেনো ফোন  না করি।

কেন, কী ব্যাপার? হঠাৎ জরুরী তলব?

কিছুই জানতে পারলাম না। তাই গতরাতটা খুবই উৎকণ্ঠায় কেটেছে।

কয়েন ঢুকিয়ে রুচিরা নম্বর ঘুরায়। পরপর ৫ বার রিং হবার পর মহিলা কণ্ঠ- হ্যালো, আপনি কে বলছেন?

আমি রুচিরা বলছি।

রুচিরা? আপনি কাকে চাচ্ছেন?

রুচিরা প্রথমে খেয়াল বুঝতে পারে নি যে কণ্ঠস্বরটা দিদির নয়। তারপর বলে আমি পারমিতার বান্ধবী। প্লিজ পারমিতাকে একটু দিবেন?

আমি পারমিতার মা।

নমস্কার মাসিমা। আপনি কোন দিন এসেছেন? 

গতকালই এলাম। তোর বান্ধবী রুচিরা । শেষ কথাটা উচ্চারণ শেষে বলল নাও তোমার বান্ধবীর সাথে কথা বল।

ওপার থেকে পারমিতা বলে- হ্যালো।

কী ব্যাপার বাসায় হঠাৎ জরুরী তলব হলো যে?

দিদির বাচ্চা হয়েছে।

রুচিরা খুশি হয়ে বলে- তাই নাকি? দিদি ভালো আছেন তো? নরম্যাল না কি সিজারিয়ান।

সিজারিয়ান। দিদি এখনও হাসপাতালে আছে। সম্ভবত কয়েকদিন থাকতে হবে।- পারমিতা বলে। 

আজ দিদিকে দেখতে যেতে পারছি না। আগামীকাল অবশ্যই আসব।

আরও কিছুক্ষণ টুকটাক কথা বলে তারপর শেষে বলল সৈকতের সাথে কথা বল। টেলিফোনটা করা হচ্ছে কয়েন বক্স থেকে। পাশে একটা লোক শুরু থেকেই টেলিফোনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। সৈকত আবার কয়েন ঢুকাল। লোকটা বুঝতে পারল যে একটু দেরি হবে। লোকটা আড়চোখে তাকিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে চলে গলে। রিসিভার নিয়ে সৈকত প্রথমে কথা বলে - হ্যালো।

হ্যাঁ বলছি। পারমিতার কণ্ঠস্বরটা কেমন যেন একটু খ্যাশখেশে শোনায়।

সৈকত জিজ্ঞেস করে কী ব্যাপার তোমার কণ্ঠস্বর টা এমন শোনাচ্ছে কেন?

গত রাত ফ্রিজের জল একটু বেশি খাওয়া হয়ে গেছে। তাই একটু ঠান্ডা ঠান্ডা লেগে আছে।

ভাগনী হলো না কি ভাগনে?- সৈকত জানতে চায়।

ভাগনী হয়েছে। খুশি হওনি?

অবশ্যই। খুশি হব না মানে! দিদি এখন কেমন আছেন?

ভালো। তবে দিদির ওপর খুব ধকল গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত সিজারই করতে হলো। দিদি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কোন কাজ করতে দিও না। দিদিকে বিশ্রামে রেখো।

পারমিতা শুধু বলে- হু।

অবশ্যই একদিন আমি বঞ্চিত হবো। 

কী রকম?

এই ধর, তোমাকে কাছে পেলে আমার মনটা বেশ ফুরফুরে থাকে। আর যদি অল্পক্ষণের জন্য কাছে না পাই তবে মনে হয় যুগ যুগ ধরে দেখা নেই। তোমার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে মনটা চঞ্চলা হরিণীর মত ছটফট করে।

ওপার থেকে পারমিতা কোন কথা বলছে না। কারণ মা কাছাকাছিই বসে আছেন। পারমিতা শুধু শুনে যাচ্ছে, আর হু, হ্যাঁ করছে।

সৈকত বুঝতে পেরেছে এই ফাঁকে একটু দুষ্টুমি করা যাবে। পারমিতা কিছুই বলতে পারবে না। রুচিরা সৈকতের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।

তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে পারমিতা?

কী করে বুঝলে?

নিশ্চয়ই এলোমেলো চুলে আছো? ঠোঁটে লিপস্টিক রঙ নেই? এভাবে তোমাকে কোনদিন দেখিনি।

কোনটাই ঠিক হয়নি। আমি একটু পরই হাসপাতালে যাব।

আমিও আসছি। হাসপাতালের নামটা বল।

সরি হাসপাতাল নয় ক্লিনিকে। এই বলে পারমিতা ক্লিনিকের নাম টা বলে দেয়।

একা আসছো কি? তাহলে আমি জিগাতলার মোড়ে অপেক্ষা করি?

কণ্ঠস্বরটা একটু নামিয়ে পারমিতা বলল আমার মা।

ওই একই আমারও। তোমার হলে, আমার হতে আপত্তি কি? শাশুড়ি মানেই মা।

পারমিতা শব্দহীন হাসি হেসে বলে বেশ কথা বলতে শিখে গেছ।

ওই লোকটা ফোন বক্সের দিকেই আবার এগিয়ে আসছে। সৈকতই প্রথম দেখতে পেল। সৈকত ভাবল লাইনে আর বেশিক্ষণ থাকা উচিত হবে না। শত হলেও পাবলিক বিষয়। ওই লোকটা এসে পৌঁছায় আগ মূহূর্ত পর্যন্ত সৈকত শুধু উচ্চারণ করলে ‘আই লাভ ইউ, পারমিতা। আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ।

পারমিতা শুধু চুপচাপ শুনেই গেল। আর ভেতরে ভেতরে হাসির দমকা হাওয়া ; সুযোগটা পেয়ে সৈকত বেশ করল।

লোকটা কাছকাছি আসতেই সৈকত বলে ‘তাহলে ক্লিনিকেই আসছি। রাখি!- এই বলে হালকা একটা চুমো বসায় রিসিভারে। রিসিভার রেখে পারমিতা একা একা হাসে। 


*

সপ্তাহ শেষে ক্লিনিক থেকে দিদি ফিরে আসে। মা এবং সন্তান দু‘জনই বেশ সুস্থ। ওরা আসার পর থেকেই বাসায় আনন্দের বন্যা বইরে চলছে। মা প্রভাময়ী দেবী সবসময় মেয়ে ও নাতনীর কাছে বসে থাকেন। পারমিতা এবার একটু প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কিন্তু অভীক মজুমদারের বিষন্ন প্রহর কাটে। কেউ তা খেয়াল না করলেও পারমিতা ঠিকই খেয়াল করেছে। আবার পরক্ষণই ভেবেছে, হয়তো ধকলটা শরীরে একটু বেশিই গিয়েছে তাই এমন দেখাচ্ছে। তবুও মনের ভেতরে কিছু অনির্দিষ্ট প্রশ্ন আনাগোনা করে। কারণ স্ত্রী এবং সন্তান দু‘জনই সুস্থ আছে, দাদাবাবুর মনটাতো প্রফুল্ল থাকার কথা। নাকি মেয়ে হয়েছে বলে সন্তষ্ট নন। পারমিতা প্রশ্নটা আর মনের ভেতর লুকিয়ে রাখতে পারেনি। দাদাবাবুকে জিজ্ঞেস করায় উনি বলেন  ‘কি যে বল-না তুমি, সন্তান সন্তানই। তা ছেলে হোক আর মেয়েই হোক। আমি খুশি, খুবই খুশিই।

পারমিতা আবার প্রশ্ন রাখে তবে দাদাবাবু আপনাকে আমি খুব একটা খুশি হতে দেখি নি ?

এমনি , মনটা ভালো যাচ্ছে না।- অভীক মজুমদার একটু এড়িয়ে যাবার চেষ্টা  করছেন ।

পারমিতা এ ব্যাপার নিয়ে আর কখনও ভাবেনি। নিজস্ব ভুবনে ডুবে গেল। ঝড়ের গতিতে দশ বারোটা দিন কেটে গেল।কিন্তু  অভীক মজুমদারের কাছে একটি দিন যেন একটি মিনিট মনে হচ্ছে।  একটি দিনেই শেষে আরেকটি দিনের আগমন বার্তায় বুকের ভেতর কষ্টগুলো হু, হু করে বেড়ে চলে। এই কষ্ট ভীষণ কষ্ট। সুদেষ্ণার আয়ু আর বড় জোর পনের থেকে বিশ দিন। এ'কথাটা অভীক মজুমদারের বুকে বিষ কাঁটা হয়ে ফুটে। অসহ্য যন্ত্রণায় অভীক মজুমদারের প্রতিটি মুহূর্ত কাটে। ভেতরে ভেতরে তিনি পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছেন। অথচ মুখে কোনদিন এই কষ্টের আঙিনায় কাউকে টেনে আনেন নি। প্রতি রাতে শব্দহীন কান্নায় বুক ভাসান। এই যে পাশে বাচ্চাকে কোলের কাছে রেখে শুয়ে আছেন সে কিছুদিন পর আর থাকবে না। কোন দৈহিক চিহৃ এই পৃথিবীর বুক বিচরণ করবে না। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে অভীক মজুমদারের কণ্ঠ কষ্টে রোধ হয়ে যায়।

খুব কাছাকাছি হয়ে শুয়ে আছেন অভীক মজুমদার। কিছুক্ষণ পরপর স্ত্রীর ঘাড়ে মুখ গুজে দিচ্ছেন। স্ত্রী সুদেষ্ণা সজাগ। ভাবছেন আদরে-সোহাগে স্বামীটি হয়ত এমন করছেন। সুদেষ্ণা চুপচাপ শুয়ে আছেন। এক ফোটা অশ্রু সুদেষ্ণার ঘাড়ে গড়িয়ে পড়ে। পতিত অশ্রুর খবর অভীক মজুমদার জানে না। সুদেষ্ণার হাত পৌঁছে যায় অশ্রু ফোটায়। অবাক হয়ে ফিরে তাকান সুদেষ্ণা। স্বল্প আলোয় কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। সুদেষ্ণা জিজ্ঞেস করেন অভীক, তুমি এখনও ঘুমাও নি?

কথা বলার খুব ইচ্ছে হচ্ছে অভীক মজুমদারের। কিন্তু কণ্ঠটা খুলতেই পারছেন না। কেমন যেন অসম্ভব রকম ভারী লাগছে। তাই চুপচাপ শুয়ে আছেন। আর সুদেষ্ণাকে আরও জড়িয়ে ধরেন। এক সময় নিজেকে আর সামলাতে পারেন না অভীক মজুমদার। ডুকরে কেঁদে ওঠেন। সুদেষ্ণা হতবাক হয়ে যান। পরম আদরে অভীক মজুমদারকে বুকের মধ্যে টেনে নেন। তারপর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে সুদেষ্ণা জিজ্ঞেস করে - তোমার কী হয়েছে অভীক?

অভীক মজুমদার কান্না থামাতে পারছেন না। বাঁধ-ভাঙা স্রোতের মতো কান্নার ঢেউ বেরিয়ে আসছে।

অভীক, অভীক শান্ত হও। তোমার কী হয়েছে আমাকে বল। এত কষ্ট তুমি বুকের মধ্যে নিয়ে বেড়াচ্ছ অথচ আমাকে কিছুই জানাও নি।

অভীক মজুমদার কথা বলতে পারছেন না। পাশের রুমে পারমিতা একা শুয়েছে। লেখাপড়া করে কিছুক্ষণ আগেই মাত্র শুয়েছে। তন্দ্রাভাব এসে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কান্নার শব্দ কানে পৌঁছতেই উঠে বসল। কান দুটো সর্তক করে বিছানায় বসে রইল। এবার স্পষ্টই শুনতে পেল, দাদাবাবু ডুকরে ডুকরে বাচ্চাদরে মত কাঁদছেন। পারমিতার তো হতবিহ্বল অবস্থা। এগিয়ে যেতে পারছে না বলে পারমিতার আরও কষ্ট হচ্ছে। হাঁটুতে মাথা গুজেঁ চুপচাপ বসে রইল। কিছুক্ষণ পরই কান্না থেমে গেল।

x

খুব কষ্ট করে অভীক মজুমদার নিজেকে সামলালেন। অবশ্য ভেতর জগতটা বিরানভূমি; ভীষণ রকম হাহাকার ওলটপালট করে দিচ্ছে। সুদেষ্ণাকে জড়িয়ে থেকে অনকক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থাকেন। তারপর কষ্টের নিঃসীম সীমানা পেরিয়ে উচ্চারণ করেন সুদেষ্ণা! আমি কি তোমাকে কোনরকম কষ্ট দিয়েছি?

সুদেষ্ণা বেশ কিছুটা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন। তারপর বলেন এতরাতে হঠাৎ এরকম প্রশ্ন করছ? আমি তোমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেছি কি?

না।

তাহলে?

আমার জানতে খুব ইচ্ছে করছে।

তুমি শুধু শুধু আমাকে দুঃখ দিতে যাবে কেন?

আমার মত সুখী মেয়ে কয়টা আছে? মেঘাচ্ছন্ন আকাশের এক চিলতে রোদের মত উজ্জল আভা জড়িয়ে যায় অভীক মজুমদারে মুখমন্ডলে। অবশ্য সুদেষ্ণা তা বুঝতে পারেনি। অভীক মজুমদার ভালোলাগাটুকু শুধু অনুভব করলেন। তারপর বলেন- তুমি সত্যি বলছ তো?

তোমার সাথে আমি কখনও মিথ্যা বলেছি? প্রসঙ্গে পাল্টে অভীক মজুমদার বলেন- এই ক'টা দিন তোমার শরীরে ওপর ঝড় বয়ে গেল। সত্যি খুব কষ্ট হয়, তোমরা মেয়েরা খুব কষ্ট সহ্য করতে পার।

তোমার ভালোবাসার কাছে এসব তুচ্ছ।- সুদেষ্ণা স্বামীর বুকে সোহাগ ঢেলে বললেন।

তুমি এত ভালো কেন সুদেষ্ণা? কণ্ঠস্বরটা আবার অসম্ভব রকম কেঁপে ওঠে। অভীক মজুমদার কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন আই লাভ ইউ, সুদেষ্ণা, আই লাভ ইউ ! আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।

কেন, আমি কি তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি নাকি? এসব কি বলছো?- সুদেষ্ণা খুবই অবাক হয়।

অভীক মজুমদার চুপচাপ । সুদেষ্ণা শুয়ে শুয়ে চিন্তা করছেন; অভীক এ'রকম আচরণ করছে কেন? আর অভীক মজুমদার ভাবছেন কয়েকদিনের মধ্যে সুদেষ্ণা নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর কোনোদিনই সুদেষ্ণার ভালোবাসার স্পর্শ পাওয়া যাবে না। নবাগত শিশুটি হবে মাতৃহারা। মায়ের ভালোবাসাহীন জগতে বেড়ে ওঠবে। ধরে রাখতে পারেনি অভীক মজুমদার নিজেকে।  অবোধ শিশুর মতো ডুকরে কেঁদে উঠলেন আবার।

পারমিতা এবার চমকে ওঠল। দিদি আবার অসুস্থ হয়ে গেল না কি? অসুস্থ হলে তো দাদাবাবু এসে ডাকতেন। না , অন্য কোন প্রবলেম হবে হয়তো । ঘরের ভেতরই পায়চারি করতে লাগল।

সুদেষ্ণাকে জড়িয়ে থেকে কাঁদতে লাগল- সুদেষ্ণা, আমি তোমাকে যেতে দেব না, আমি তোমাকে যেতে দেব না !

সুদেষ্ণার মনে এবার সন্দেহ জাগে। চুপচাপ চিন্তা করতে থাকেন- আগে অবশ্য মাথাটা কেমন যেন চক্কর দিত। কিছুক্ষণ থেকে আবার ঠিক হয়ে যেত। কিছদিন যাবৎ মাথাটা কেমন ঝিম ধরে থাকে। আর চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে। সর্বক্ষণ সারাটা শরীর কেমন যেন আলগা আলগা মনে হয়। পুরো শরীরটাই একটা অতিরিক্ত বোঝার মত লাগে। তাহলে কি কোন কঠিন অসুখ বাঁধিয়েছি? আমি তার বিন্দু বিসর্গও জানি না! তাহলে কি আমি ! সুদেষ্ণা আর ভাবতে চায় না। বাচ্চাটাকে কাছে টেনে নিয়ে চুপচাপ থাকে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ