ডঃ গৌতম সরকার
লকডাউনের আড়াই মাসের মাথায় মালতীর বুকের দুধ শুকিয়ে গেলো,
বাচ্চাটারও বয়স তখন ঠিক আড়াই মাস। নিমাই ছমাস আগে রাঁচি গেছে ঠিকে মজুরের কাজ নিয়ে,
এখনো মেয়ের মুখ দেখেনি। দুধ শুকিয়ে যেতে মালতী পড়লো আতান্তরে। এতদিন নিজের পেটের জোগাড় করতে টুকটাক এর বাড়ি মুড়িভাজা
, ওর বাড়ি ধানসেদ্ধ করে কোনরকমে কেটে যাচ্ছিলো,
এখন আবার মেয়ের পেটে টান পড়তে কি করবে বুঝে উঠতে না পেরে কেঁদে গিয়ে পড়লো মজুমদার গিন্নীর কাছে। গত কয়েকদিন ধরে সে এই বাড়িতে ধানসেদ্ধর কাজ করছে৷ নিমাই লকডাউন চালু হওয়ার পর থেকে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। মজুমদার গিন্নি সব শুনে কালো গাইয়ের আধপোয়া দুধ দিয়ে বললে, "খুব পাতলা করে দিনে বার চারেক খাইয়ে দিবি”৷ মজুমদার গিন্নি মানুষ ভালো , শুধু ওইদিনই নয়,
তারপর থেকে রোজই কাজ শেষে বরাদ্দ আধপোয়া দুধ নিয়ে মালতি ঘরে ফিরেছে। কিন্তু সারা দিনে ওইটুকু দুধে মেয়েটার পেট ভরেনা। রাত্রে যখন খিদের কষ্টে মেয়েটা কাঁদতে থাকে তখন অসহায় আক্রোশে মালতী নিজের বুকদুটো প্রানপন শক্তিতে চেপে ধরে৷ কিন্তু হায়!
বৃথাই চেষ্টা....একফোঁটা দুধও বেরিয়ে আসেনা৷ বাচ্চাটা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে।
সেদিন মালতী ধান সেদ্ধ করে পাশের খামারে শুকোতে দিচ্ছে,
খটখটে আকাশে রোদ গনগন করছে
, এই রোদে দুঘন্টাতেই ধান শুকিয়ে যাবে। এমন সময় খেয়াল করলো একটা দীর্ঘ ছায়া তার ছায়াকে গ্রাস করে ওদিকের শিরীষ গাছটাকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে। ভীষণ চমকে তাকিয়ে দেখে তার ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে মজুমদার গিন্নীর একমাত্র ছেলে; বাইরে কোথায় বড় কলেজে পড়াশোনা করে, লকডাউনে কলেজ বন্ধ থাকায় বাড়ি চলে এসেছে। মালতি প্রথমে একটু ভয় পেয়ে যায়,
তারপর ভালো করে ছেলেটাকে দেখে তার স্বাভাবিক মনে হয়না। অকারণে হাঁফাচ্ছে,
ঠিক চোখ তুলে তাকাতে পারছেনা,
ঠোঁট নড়ছে কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছেনা। মালতি ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে,
একবার চোখাচোখি হতে কিছু বলতে গেলো, তারপর বলতে না পেরে যেমন এসেছিলো তেমনিই হঠাৎ করে তড়িঘড়ি পায়ে বাড়ির দিকে চলে গেলো।
দিন পনের পর ধানসেদ্ধর কাজ শেষ হলো আর কালো গরুও দুধ দেওয়া বন্ধ করলো,
অন্তত মজুমদার গিন্নী তাই বললেন। মালতির মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়লো। মেয়েটাকে তাহলে খাওয়াবে কি!
তবুও পরেরদিন ঘটি হাতে মজুমদার গিন্নীর কাছে গিয়ে অনুনয়-বিনয় করলো,
কিন্তু কোনো লাভ হলোনা। যখন খালি ঘটি নিয়ে ফিরে আসছে তখন চমকে দিয়ে খড়ের গাদার পিছন থেকে একটা হাত বেরিয়ে এসে মালতিকে সাপটে পিছনে টেনে নিয়ে গেলো। ছেলেটির এক হাতে একটা ছোট বোতল ভর্তি দুধ,
দুধটা মালতির চোখের ওপর নাচিয়ে তার গলা,
বুক, কাঁধে মুখ ঘষতে লাগলো। মালতি চেঁচাবে,
না সদ্য গোঁফ ওঠা ছেলেটিকে ঠেলে সরিয়ে দেবে ভেবে উঠতে পারলোনা;
কিন্তু তার চোখ দুটোকে কে যেন আঠা দিয়ে জুড়ে দিয়েছে আধ লিটারের পেপসির বোতলে ভরা দুধটার সঙ্গে। কিছুক্ষণ অর্বাচীন ছটফটানির পর,
তার হাতে দুধের বোতলটা দিয়ে কানে কানে বললো, ' রাত্রে আসিস, আরও দুধ দেবো।"
মালতি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওকে দুম করে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে ভেতর বাড়িতে পালিয়ে গেলো।
আজ দুদিন মালতির নিজের পেটেও কিছু পড়েনি,
মেয়েটাকেও একফোঁটা দুধ দিতে পারেনি। প্রতিদিন আশায় আশায় রাত্রি বেলায় চুপিচুপি খড়ের গাদার পিছনে গেছে। দুধের লোভে নিজেকে বিক্রি করেছে , কিন্তু কাজ শেষ হয়ে যাবার পর কাঁচুমাচু মুখে ছেলেটি বলেছে, " বহু চেষ্টা করেও মায়ের চোখের আড়ালে দুধ সরাতে পারিনি, কাল তোমাকে ডবল করে দেবো।"
মালতির বেশ্যাবৃত্তির বয়স বাড়তে থাকে,
কিন্তু দুধের দেখা মেলেনা।
বেশ্যাবৃত্তির সপ্তমদিন সকালে বাচ্চাটা মালতির শরীরের সাথে লেপ্টে মরে পড়েছিল। সারাটাদিন সে ফ্যালফ্যাল চোখে বসে রইলো৷ সকাল গড়িয়ে বিকেল, বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামলো। আশপাশের বাড়ি থেকে শাঁখের আওয়াজ ভেসে আসে। মালতি উঠে দাঁড়ায়, বাক্স খুলে পছন্দের সিন্থেটিক শাড়িটা বের করে , কপালে আর সিঁথিতে গাঢ় সিঁদুরের প্রলেপ লাগায়, তারপর রাত একটু গভীর হতে পা টিপে টিপে বেরিয়ে পড়ে। ব্লাউসের মধ্যে রাখা নতুন ব্লেডের টুকরোটায় একটু অস্বস্তি হচ্ছে, কিন্তু পাত্তা দিলোনা। প্রেমিক উদগ্রীব অপেক্ষায় ছিলো, মালতিকে এই সাজে দেখে তার কাম শতগুণে বেড়ে গেলো। মুহূর্তকাল অপেক্ষা না করে ঝাঁপিয়ে পড়ে শাড়ি জামা দুহাতের প্রবল আক্রোশে ফালাফালা করে নগ্ন শরীরটায় উপনীত হলো। মালতির বন্ধ চোখের ক্যানভাসে সারা আকাশ জুড়ে তার মেয়ে খেলে বেড়াচ্ছে, মালতি যখন ব্লেডধরা হাতটা সবেগে তার প্রেমিকের তলপেট লক্ষ করে চালিয়ে দিলো তখন তার সোনামেয়ের ‘মাম-মাম’ ডাকের আদুরে স্বরে পার্থিব পশুর মরণ চিৎকার অনায়াসে চাপা পড়ে গেল। মালতি মুখটা যতটা সম্ভব উঁচু করে আকাশটাকে পরম আদরে একটা চুমু দিয়ে রক্তমাখা ব্লেডটা এবার নিজের গলায় চালিয়ে দিলো ।
কোলকাতা,পশ্চিমবঙ্গ,ভারত ।
আরও পড়ুন-https://www.weeklychailipi.com/2021/01/Hashir-golpo-mojar-golpo.html
প্রিয় পাঠক ,লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে ,তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না ।লেখা পাঠাতে পারেন আপনি । লিখতে পারেন-ভালোবাসার গল্প (Valobashar Golpo) ছোট গল্প (Choto-Golpo) ভালবাসার গল্প (Balobashar Golpo) হাসির গল্প।(Hashir Golpo) জীবনের গল্প (Jiboner Golpo) প্রেমের গল্প (Premer Golpo) । সহ সাহিত্য বিষায়ক যেকোন লেখা । মেইল করুন- chailipimagazine@gmail.com
0 মন্তব্যসমূহ