সর্বশেষ

10/সর্বশেষ/ticker-posts

মন খারাপের গল্প - আনিসুর রহমান আনজুম



অধ্যাপক মো আনিসুর রহমান (আনজুম)

আমার ঢাকা কলেজের বন্ধু সঞ্জীব চৌধুরীঅসম্ভব মেধাবী আর মন খারাপ করা একজন ভালো মানুষ। ভালো মানুষ! আবার মন খারাপ করা কিভাবে হয়?  তাই না? হয়, যদি একজন মানুষ খুব সরল হয় আর তার সরলতার সুযোগ অন্যজনরা নিচ্ছে আমরা টের পাচ্চ্ছি কিন্তু তাকে কখনো বুঝানো যায় না। পদে পদে সে ধরা খায়। আর যখন নিজে নি:স্ব থাকে জানে কয়েকজন বন্ধু আছে যাদের উপর অত্যাচার টা চলে মানে খাবারের টাকা, সিগারেটের টাকা সব বন্ধুদের বহন করতে হয়। তাই ওর ভালোমানুষী আমাদের জন্য ছিল একটা বিডম্বনা।

সব সময় হাসি খুশী, আড্ডার মধ্যমনি সে ছিলো। ওরও যে মন খারাপ থাকে এটা আমরা কখনো চিন্তা করি নাই।রএকদিন কি কারনে জানি আমার মন খারাপ ও ডাকলো চল বন্ধু এখন আর ক্লাশ না করি, আমার রুমে চল কয়েকদান হয়ে যাক, মানে তাশ খেলা হবে।

আমার মন খারাপের কথা বললে, কিছুটা অবাক করে বলে “তোর মন খারাপ মানে তাহলে মাঝে মাঝে মন ভালো থাকে”।
মানে? মাঝে মাঝে ভালো থাকে? কি বলতে চাস?

নারে, আমি কিছু বলতে চাই না তোদের মাঝে মাঝে মন খারাপ থাকে। তোরা কত সুখী।

তোর কথা আগা মাথা কিছু তো বুঝতাছি না আমি। যা কবি, সোজাসুজি ক এত তেনা পেচ্যাস ক্যা।

আমি তেনা পেচাইলাম কই? তোদের তো তাহলে মন ভালোও থাকে যেহেতু তোরা টের পাছ “আজ মনটা খারাপ”।
কিন্তু বন্ধু আমি তো এইটা টের পাইলাম না। মন ক্যামনে ভালো থাকে সেইটাই তো বুঝলাম না। আমারটা সব সময় খারাপই থাকে।

কিছুটা অবাক হই ওর মন কিভাবে খারাপ থাকে কখনও মনে হয় নাই। সিলেট থেকে ওর বাবা যে টাকা পাঠান হোষ্টেলের অনেক কম ছেলে এর অর্ধেক টাকায় মাস কাবার করে।

মানুষ নাকি সবচেয়ে বেশী মিথ্যা বলে ধর্মগ্রন্থ ছুয়ে যেটা আদালতে সে বলে। আর সবচেয়ে সত্যি বলে মদের গ্লাস ছুয়ে।
এরকম মূহুর্তে ওর মন খারাপের গল্প শুনতে চাই। সেও এক এক করে সব বলে যায়। 
ওরা বৃহত্তর সিলেটের মোটামুটি বনেদি ধনী পরিবার ওর বাবাও মাসে ওঁকে ভালো টাকা পাঠায় কিন্তু গ্রামের মানুষের চিকিৎসা লাগলে ঢাকা পাঠাতেন অবশ্যই খরচ দিয়ে কিন্তু এরা কেমন করে জানি তারা সন্জীবের ঠিকানা জোগাড করে ফেলতো তারপর যতদিন চিকিৎসা শেষ না হতো সন্জীবের রুমটা তারা স্হায়ী ঠিকানা বানিয়ে ফেলতো আর যেহেতু কর্তা বাবু পাঠিয়েছেন তাই তারা তো এখন মেহমান। তাই মেহমানদারি ওকেই করতে হোত। 

“জানিস আমি কিন্তু বুঝি বাবুজি ওদেরকে আমার ঠিকানা দেন নাই, আর টাকাও তো দিয়ে দিছে তারপরও তারা মিথ্যা বলে আমার এখানে থাকে খরচ আমাকেই করতে হয়”। শেষে তোদের টাকায় আমাকে চলতে হয়। মানুষের এত hypocrisy দেখে আর তোদের এক তরফা ভালোবাসা দেখে মন ক্যমনে ভালো থাকে বল? এখানে যারা আসে তারা অনেকেই আমার রক্তের সম্পর্কের আত্নীয় কিন্তু তোরা তো আমার কেউ না পরিচয়ও বেশী দিনের না। মানুষ এমন কেন বলতে পারিস?

আসলে সবকিছুর ব্যাখ্যা হয় না। আর ব্যাখ্যা খুঁজে কি লাভ যদি না সমাধান জানা থাকে। এভাবেই মন খারাপ নিয়েই সে চলে গেল।আকাশের তারা হয়ে আমাদের মন খারাপ করে দিয়ে।
তাই এখন যদি কারো কাছে শুনি “আমার মন খারাপ” সেই গল্প আর শুনতে চাই না। শুধু বন্ধুর মুখটা ভেসে উঠে জানিনা এখনও কি বন্ধুর মন খারাপ।
তখন হয়তো বয়স কম থাকার জন্য বুঝি নাই অনেক কিছুই কতই বা বয়স হবে তখন  আমাদের বডজোড ষোল। কিন্তু এখন ওর গানগুলি শুনি আর মন খারাপের কারন গুলি খুঁজি:

"আমি তোমাকেই বলে দেব
কি যে একা দীর্ঘ রাত, 
আমি হেঁটে গেছি বিরান পথে।

আমি তোমাকেই বলে দেব 
সেই ভুলে ভরা গল্প, 
কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরজায়....
ছুঁয়ে কান্নার রং, ছুঁয়ে জোছনার রং।

অধ্যাপক মো আনিসুর রহমান (আনজুম)
বিভাগীয় প্রধান (চক্ষু) 
ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. অধ্যাপক আনিসুর রহমান আঞ্জুম স্যার কে চিনি প্রায় বিশ বছর যাবত। এত সুন্দর করে তিনি মন খারাপের গল্প লিখতে পারেন সত্যি কখনো চিন্তা করি নি। গায়ক সঞ্জীব কে আমরা সবাই জানি, আজ লেখক আঞ্জুমকে চিনলাম।

    উত্তরমুছুন
  2. মন খারাপ করার মতো অজান্তেই মনের গহীনের হারিয়ে যাবার মতো একটি লিখা...😢

    উত্তরমুছুন