ডঃ গৌতম সরকার
কি লিখি তোমায়....!
এত কথা লেখা বাকি রয়ে গেছে-----
তোমাকে বলা হয়নি, আমাদের ক্যাম্পের সামনে পপলার গাছের পাতাগুলি
ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে যাচ্ছে ;
ওরা বলছে, এটা হয়, শীতের সময় একধরনের পোকা বাসা বাঁধে।
তাদের লালারস আস্তে আস্তে পাতাগুলোকে হলুদ করে তোলে—
কেন যেন মৃত চোখেদের কথা মনে পড়িয়ে দেয়।
আচ্ছা তোমাকে কি অক্টাভিও-র কথা লিখেছিলাম?
সেই ছেলেটা গো, যে যুদ্ধক্ষেত্রে বীরের মত যুদ্ধ করে,
কিন্তু আরশোলা দেখলে ভীষণ ভয় পায়---
যে ছেলেটা দারুন নকল করতে পারে,
আমাদের ব্রিগেডিয়ারের হাবভাব এমন নকল করে যে
আমরা হেঁসে খুন হয়ে যাই।
যার বৃদ্ধা মা বহুদূরে এক গ্রামে একাকী বসে ছেলের
ঘরে ফেরার দিন গুনছে……….
পরশুদিন অক্টাভিও মরে গেছে
আর ঠিক আজ ওর লাগানো পপি গাছটায়
একটা রক্তলাল ফুল ফুটেছে।
এখানে কদিন ধরে খুব বরফ পড়ছে,
আশপাশ সাদা বরফ কুঁচিতে ঢেকে গেছে......
নিষ্প্রাণ, নিস্পন্দ বরফের সমুদ্র।
কতদিন পাখির ডাক শুনিনি...!
গাড়ির আওয়াজ, শিশুর চিৎকার, নদীর গান !
....মাঝে মাঝে মনে হয় শব্দরা আছে চারপাশ
আমিই বোধ হয় বধির হয়ে যাচ্ছি৷
তবে একটা শব্দ শুনতে পাই, বুলেটের শব্দ।
তীব্র হাওয়ায় সাথে মিশে কানের পাশ দিয়ে
শোঁ শোঁ আওয়াজ তুলে বেরিয়ে যায়।
এখন তুমি কি করছো, আমি দিব্য দেখতে পাচ্ছি।
বিকেলের গা ধোয়া সেরে একটা মাড় ভাঙা শাড়ি পড়ে,
খোঁপায় বেলফুল লাগিয়েছো তো?
ছাদের আলসেয় কনুই রেখে মুখ নিচু করে নিচের রাস্তা দেখছো....
তোমার ছেলে এখনও খেলে ফেরেনি।
এখনও কি সে বদমায়েশটা ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে
পিছন থেকে তোমাকে জাপটে ধরে?
আর তুমি ছদ্ম বকুনিতে ভ্রূভঙ্গে তাকে ভয় খাওয়াতে চাও....
আচ্ছা ছাদে টবের গোলাপ গাছটায় কুঁড়ি এলো?
লক্ষ্মীর মা ঠিকঠাক কাজে আসছে?
আর তোমার হাঁটুর ব্যাথাটা.....!
মাঝে মাঝে খুব ক্লান্ত লাগে,
যুদ্ধ শেষে ফিরে ধরাচুড়ো না ছেড়েই শুয়ে পড়ি,
বাঙ্কারে শুয়ে জানলা দিয়ে একটুকরো আকাশ দেখা যায়,
তবে জানলার অধিকাংশটাই অধিকার করে বসে আছে পপলার গাছটা...
দিন দিন কি কুৎসিত হয়ে উঠছে গাছটা !
হলুদ থেকে ফ্যাকাশে হলুদ,...তারপর কি এক গা গোলানো রং নিচ্ছে গাছটা...!
হঠাৎ পচা শবদেহের এক তীব্র গন্ধে ভরে উঠছে আশপাশ
গাছটার গা থেকে কেমন এক আঠালো রস গড়াতে শুরু করেছে
আর পোকাগুলো পাতা ছেড়ে মহানন্দে সেই রস চেটেপুটে খাচ্ছে।
গন্ধটা আস্তে আস্তে বাতাসে মিশে দমবন্ধ করে দিচ্ছে,
আমার নিঃশ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে---
আমার দুচোখে এক আঠালো ঘুম নেমে আসছে.....৷
কত কিছু লেখা বাকি রয়ে গেল !
0 মন্তব্যসমূহ