শুভ্র সাকীফ
এই বানু , শব্দ কিনবি ?
বানুঃ শব্দ দিয়া কি শরীর পাওন যাইবো সাহেব !
কি আর করমু কও ? বাল-বাইচ্ছা তো কেউ নাই মোর । বউরে তো আরো কত আগে খোদা আসমানে উঠাইয়া নিছে । একা মানুষ শব্দ ফেরি কইরা দিনকাল যায়।
বানুঃ মানে ?
কইছি যে , আমি হইলাম গিয়া শব্দের ফেরিওয়ালা। শব্দ ফেরি করি , কখনও এই ফুটপাতে আবার কখনও সাঁই-সাঁই করে উল্টো ছুটে চলা এই কাকের গোরস্তানে ।
এই তিনচাকায় করেই তো শব্দ হাঁটে । হাঁটতে- হাঁটতে শব্দ ক্লান্ত হয়ে পড়ে । কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয় শব্দ । ক্লান্তিকর রাস্তায় চলতে চলতে , দূরের দিগন্তে চেয়ে থাকে , চেয়ে থাকে কপোত - কপোতীর চোখাচোখির বর্ণমালায় । মনে কাম জাগে । শব্দের গন্তব্যেহীন পথচলা আবার শুরু হয় ।
দিনভর আলোর মিছিলে স্লোগান দিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে সূর্য । অতঃপর , সূর্যও একটু জিরিয়ে নেয় । কোমল আঁধারে ঢাকা পড়ে যায় সকল পাপবোধ । সন্ধ্যা নামার মধ্যে দিয়ে রিকশার হুড গুলো অধিকার আদায়ের দাবিতে মাথা উঁচু করে। তখনি শব্দ বুড়িগঙ্গার তীরে বসে দু'ফোঁটা জল ঢেলে দেয় গঙ্গা মাতার বক্ষঃস্থলে । পাওয়া না পাওয়ার হিসাব চুকিয়ে আবার শব্দ রাস্তায় নামে , সাঁই-সাঁই করে ছুটে চলা যানবাহনের আওয়াজ , ট্রাফিকের বীভৎস হুইসেল ও গোলাপের পাপড়িতে রাখা যুবকের হাতখানি আর আঙুলের গন্তব্যেহীন ছুটে চলার নৃত্য ধ্বনি চাপিয়ে কানে বাজতে থাকে ভিন্ন কোন সুর। বড্ড চেনা এ সুর , এ স্বর । সহ্যসীমা বাঁধ ভাঙ্গে , মগজে ঠাঁই মেলে উচ্চহার্জের এক আগন্তুক সিগন্যালের । মুখ গুঁজে দিতে মন চায় কোন পুষ্পের বক্ষঃস্থলে।
মুখ-উজ্জ্বল করে শব্দ চেঁচিয়ে উঠে , এই অপকর্মা , এটা তোর বাপের পতিতালয় নয় । শব্দের সুরেও কামের তীক্ষ্ণ আভাস। শব্দ নীরবতার দেওয়াল টেনে হারিয়ে যায় কোন কালো নক্ষএের মস্তিষ্কে ।
অপর্কমা , এই অপকর্মা বলে শব্দ ডাক দেয় । ধীরে ধীরে শব্দ ফুলের ঘ্রাণে বন্দী করে ফেলে অপকর্মাকে । অপকর্মা তৃষ্ণার্থ বালির এক বিন্দু , নিজেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয় শব্দের মোহ থেকে। রক্ত শীতল হয়ে উঠে ধীরে ধীরে , উওেজনা তুঙ্গে । কানে বাজতে থাকে মধু-চন্দ্রিমার সেই পরিচিত সুর। এভাবে সূর্যের ঘুমভাঙা ভোর থেকে শুরু হয় তৃষ্ণার্থ বালির ক্ষুর্ধাত গোঙানি ।
0 মন্তব্যসমূহ