সর্বশেষ

10/সর্বশেষ/ticker-posts

ছোট গল্প- নতুন ভোরের প্রথম ফুল

 

 


মোঃ আকরাম হোসেন

 

 

বাড়ির ভিতরেই কেমন যেন একটা হৈ-হল্লায় ঘুম ভেঙ্গে গেল হক সাহেবের। ঘড়ি দেখলেন--এগার বেজে দশ মিনিট, রাত ও তো হয়নি তেমন একটা। উঠোনে এসে দাঁড়ালেন, ততক্ষণে পরিবারের অন্য সদস্যরাও এসে জড় হয়েছে। বাড়ির পুরোনো চাকর বাইতুল্লা শক্ত হাতে ধরে আছে ওর কচি হাত দুখানা। বাল্য পেরোয় নি এখনো--কত আর হবে বয়স,বড় জোর আট/ন'বছর। গ্রামেরই আরেক পাড়ার ছেলে। বাবা দিন মজুর। এরই মধ্যে কিছু কিল-ঘুঁষি,চড়-থাপ্পড় পড়ে গেছে, যার প্রমাণ কচি গালে পাঁচ আঙ্গুলের স্পষ্ট ছাপ। পাশে আর একটা চাকর একটা শক্ত লাঠি নিয়ে প্রস্তুত শুধু হুকুমের অপেক্ষা।ভয়ে কাঁপুনি ধরেছে ছেলেটার।

 

হক সাহেব শিউরে উঠলেন,একটু দেরি হলেই হয়ত বা এই ছেলেটাকে বরণ করতে শিশু রাজন বা ইদানীং কালের আরও কিছু শিশুর করুণ পরিনতি। এক রকম ছোঁ মেরেই নিজের হাতে তলুতে নিলেন ছেলেটাকে।

 

ওমনি বাদী গনের সম্মিলিত জবানবন্দী শুরু হয়ে গেল শতকণ্ঠে---যা থেকে আসল ঘটনা উদ্ধার করাই কঠিন। হক সাহেবের ফুটমাঠ সদৃশ বাড়ির উঠানের একধারে রয়েছে সুন্দর সাজানো-গোজানো একখানি ফুলের বাগান-যেখানে রয়েছে বিচিত্র ফুলের সমারোহ। তিনি নিজে কখনো সেখান থেকো ফুল দূরের কথা একটা পাতাও ছিঁড়েন না,অন্যদের জন্যও একই নিয়ম।

 

তিনি কষ্ট করে যে টুকু বুঝলেন-- এই বেয়াদব শয়তানের বাচ্চা ফুল চুরি করতে এসে হাতে-নাতে ধরা পড়েছে।চুরি যা করেছে তার অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে অন্ধকারে গাছপালা ভেঙ্গে তছনছ করাতে। ওর ভাগ্য ভাল,সাহেব নিজে হাতে ধরলে হয়ত গুলির তলেই যেত।

 

ছেলেটা হক সাহেবের হাতে এসে বেশি ভয়ে আরও বেশি কাঁপতে শুরু করেছে। হক সাহেব এবারে বিবাদির বক্তব্য শুনতে চাইলেন। যথা সম্ভব অভয় দিয়ে নরম সুরে জিজ্ঞেস করলেন ওকে "এই ব্যাটা, এমন একটা কাজ কেন করলি "?

 

অপমান, ভয় ও আঘাতের যন্ত্রনায় ছেলেটা তখন হতবিহ্বল প্রায়। কা ন্না ভেজা স্বরে অস্ফুটে যা বলল তার মর্মার্থ দাঁড়ায় একম:আগামী কাল ২১শে ফেব্রুয়ারী,শহীদ মিনারে বন্ধুরা সবাই ফুল দিবে। কিনতু সে বাবার কাছে ফুল কেনার জন্য টাকা চাইলে বাবার কাছ থেকে টাকা পায়নি পেয়েছে এক থাপ্পড় ও তিরস্কার মিশ্রিত উপদেশ। ওসব বড়লোকদের জন্য, যাদের চাল কেনার পয়সার টানাটানি, তারা ফুল কিনবে ক্যামনে? হক সাহেব অন্যমনস্ক, আসলে যুগ পাল্টেছে ফুল এখন গ্রামাঞ্চলে নিতান্ত দরিদ্রের কাছেও পণ্য। মনে পড়ে আজ বিকেলে পরিবারের ছোট সদস্যদের এক হাজার টাকার ফুল কিনেছেন।

 

হঠাৎ অন্যমনস্কতার সুযোগে হক সাহেবের পায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে ছেলেটা। হাউমাউ করে কেঁদে বারবার বলতে "আমাকে মাফ করেন চাচা, আমি আর কখনো এমন কাজ করব না"।

 

সবাইকে অবাক করে দিয়ে সস্নেহে পা থেকে উঠিয়ে চুরি ফুলের ব্যাগটা ধরিয়ে দেন ওর হাতে।সহাস্যে বলেন "ক্ষমা তোকে করতে পারি এক শর্তে--কালভোরে সব আগে শহীদ মিনারে পৌঁছতে হবে তোকে, আমি থাকব ওখানে একসাথে ফুল দিব আমরা"। 

 

ছেলেটার চোখে দ্বিগুন হল জলের ধারা। জলভরা ঝাপসা চোখে বুঝতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় কি ঘটল ঘটনাটা।


প্রিয় পাঠক, আপনার যদি এই গল্পটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার মতামত জানাতে পারেন কমেন্ট সেকশনে। আমাদের ওয়েবসাইটে  বিভিন্ন ধরনের গল্প (Golpo) প্রকাশ হয়ে থাকে। 

যেমন- ভালোবাসার গল্প (Valobashar Golpo) প্রেমের গল্প(Premer Golpo) ছোট গল্প( Choto Golpo) জীবনের গল্প(Jiboner golpo)। লিখতে পারেন আপনিও.. লেখা পাঠাতে ইমেইল করুন- chailipimagazine@gmail.com.


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ