সর্বশেষ

10/সর্বশেষ/ticker-posts

প্রেমের গল্প - আকাশনীলা



সাবিকুর সিফাত

সা‌ড়ে এগা‌রোটা বাজ‌তে চল‌ছে।
অাকাশ বার বার ঘ‌ড়িটার দি‌কে তাকা‌চ্ছে।
বারবার তাকা‌লে ম‌নে হয় সময় আট‌কে রাখা যায়।
না।
তবুও তাকা‌চ্ছে।ও‌দি‌কে এই ক্রি‌টিক্যাল কেসটা রে‌খেও বের হ‌তে পার‌ছে না।
অ‌ক্সি‌জেন স্যাচু‌রেশন ফল কর‌ছে।রোগীর অবস্থা ভা‌লো ছিল না তাই আজ‌কেই ও‌টি‌তে তুল‌তে হ‌লো।এ‌পে‌ন্ডিক্স বাস্ট ক‌রে‌ছে।‌ছে‌লেটার বয়স ১২ বছর।অবস্থা ক্রি‌টিক্যাল দে‌খেই আজ দে‌রি হ‌চ্ছে।

অপা‌রেশন শেষ ক‌রে ত‌ড়িঘ‌ড়ি ক‌রে বের হ‌লেন। 
অনেক রাত হ‌য়ে গে‌ছে ।একটা সিএন‌জি নি‌য়ে তাড়াতা‌ড়ি চ‌লে গে‌লেন বাসায়।এত তড়িঘ‌ড়ির কারন একটাই। 
নীলা। 
নীলার জন্যই দে‌রি কর‌তে পা‌রে না। তবুও অনেক ব্যস্ত থাক‌তে হয় অাকা‌শের।

বাসায় এসে দে‌খে নীলা ঘুমা‌চ্ছে।
যাক,‌নি‌শ্চিন্ত হ‌লেন। খুব গাঁঢ় ক‌রে কাজল দি‌য়ে‌ছে।মে‌য়েটা বড্ড মায়াবী।চো‌খে মু‌খে একরকম মায়া লে‌গে থা‌কে সবসময়।এক চিল‌তে হা‌সি ঠোঁ‌টের কো‌ণে আট‌কে অা‌ছে।বুঝ‌তে পার‌লেন অাজও চাঁ‌দের বু‌ড়ির সা‌থে তাহ‌লে খুনসু‌ঁটি হ‌য়ে‌ছে ভা‌লোই।‌‌
প্রায়ই ও চাঁ‌দের বু‌ড়ির সা‌থে ভাব জমায়,গল্প জু‌ড়ে দেয়-হা‌সি কান্নার,আনন্দ,ভা‌লোবাসার।আ‌মি অদ্ভুতভা‌বে ভা‌বি তখন।

‌সেই বহু বছ‌রের পুর‌নো ডা‌য়েরীটা চো‌খে এলো-
ওর সা‌থে অামার প্রথম দেখা হয় ওর ভা‌র্সি‌টি‌তে।তার অা‌গে ওর ছ‌বি দেখ‌ছিলাম একবার।‌কি চাঞ্চ‌ল্যে ভরা মে‌য়েটা,‌যেন প্রজাপ‌তি হ‌য়ে ঊড়ে বেরায় সারাক্ষন।

অামি তখন মাত্র ‌বি‌সিএস শেষ ক‌রে উপ‌জেলার হাসপাতা‌লে যোগ দেই।চাক‌রির একটা কা‌জের জন্য ঢাকায় যে‌তে হয়।
মামা টে‌লি‌ফোন ক‌রে ব‌লে‌ছেন যে,আ‌মি একটা ঠিকানা দি‌চ্ছি ওখা‌নে যা‌বি।ওখা‌নেই থাক‌বি।একটা ঠিকানা আর টে‌লি‌ফোন নম্বরই দি‌লেন আর লোকটার নাম বলে দি‌লেন।জ‌মির সা‌হেব।
অা‌মি ম‌নে ম‌নে জ‌মির সা‌হে‌বের সম্প‌র্কে একটা অইডিয়া ক‌রে নিলাম কেমন হ‌তে পা‌রে।‌ছোট বেলা থে‌কে অভ্যাস। ভা‌লোই লা‌গে অামার কা‌ছে খেলাটা খেল‌তে।কখ‌নোই মিলত না। 
কি অদ্ভুত খেলা!
যা হোক, জ‌মির সা‌হেব সম্প‌র্কে যে ধারনাটা করলাম তা কোনভা‌বেই তার ধা‌রে কা‌ছে মিলল না।


সকা‌লে সদরঘা‌ট নামলাম।
লঞ্চ থে‌কে নে‌মে রিক্সা নিলাম।‌খিলগাঁও ‌তিলপাপাড়া যা‌বো।আকা‌শে মেঘ আছে। কখ‌নো মেঘ থা‌কে আবার কখ‌নো মেঘ কে‌টে যায়।এই আবার ঝুপ ক‌রে না‌মে বৃ‌ষ্টি। এ যেন রোদ বৃ‌ষ্টি।গ্ লোকজন ব‌লে পা‌তি‌শিয়া‌লের বি‌য়ে।৮ টার দি‌কে পৌঁছলাম।
‌রিক্সা দি‌য়ে নাম‌তেই গে‌টের লোক গেট খু‌লে দি‌লেন।রিক্সা ভাড়া প‌কেট থে‌কে বের ক‌রে ব্যাগ ভিত‌রে নি‌য়ে গে‌লেন।

ভিত‌রে ঢুক‌তে কাঁচাপাঁকা চু‌লের একজন লো‌কের সা‌থে দেখা হল।
অা‌রে, অা‌সো অাকাশ আসো।‌তোমার মামা টে‌লি‌ফোন ক‌রে‌ছিল মাত্রই,তু‌মি পৌঁছ‌লে কিনা তাই।আ‌মি ফোন দি‌য়ে দি‌চ্ছি তু‌মি ফ্রেশ হ‌য়ে আসো নাস্তা করব।
নাস্তা ক‌রে জ‌মির সা‌হে‌বের সা‌থে কথা হ‌লো অনেক।
নাহ,অামার ধারনার সা‌থে তার কোন মিলই নেই। ত‌বে কথা ব‌লে জান‌তে পারলাম,উ‌নি মামার বন্ধু।
মামা যখন ব্যবসার কা‌জে ঢাকায় ছি‌লো মামা অার উনি একই পাড়ায় থাক‌তেন।মস‌জি‌দে নামাজ পড়া থে‌কেই ভাব,ওখান থে‌কেই বন্ধুত্ব।প‌রে জ‌মির সা‌হেব খিলগাওঁ জ‌মি কি‌নে বা‌ড়ি ক‌রে চ‌লে এসে‌ছেন না‌কি।
ডাক্তার হি‌সে‌বে উনি আমার কা‌ছে একজন রোগী।হা‌র্টের রোগী। উনার হা‌র্টে তিনটা রিং পড়া‌নো।ত‌বে লোকটা মজার।হাস‌তে পা‌রে খুব।হাসা‌তেও জা‌নে।গল্পও জা‌নে হাজার।এলাকার সবাই একনা‌মে চি‌নে তা‌কে,
সা‌হি‌ত্যিক জমির খান না‌মে।‌চেনা জানা যার সা‌থেই দেখা হ‌তো হা‌সি‌য়ে ছাড়‌তেন।অবশ্য হা‌র্টের রোগী‌দের হা‌সিখু‌শিই থাকা উচিত,থাক‌তে হয়।ত‌বে চিন্তা একটাই।‌সেটা তার মে‌য়ে।

হুটহাট ক‌রে বৃ‌ষ্টি না‌মে।দুপু‌রে বের হবার সময় জ‌মির সা‌হেব ‌বল‌লেন কোন দি‌কে যাচ্ছ?
অামার কাজ নেই কোন ,ঢাকা বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের দি‌কে যা‌বো একটু।
নীলার ছ‌বি দে‌খি‌য়ে বল‌লো ,এই হল নীলা।
অাচ্ছা বাবা তাহ‌লে নীলার জন্য একটু ছাতাটা নি‌য়ে যাও আর ও টাকা নি‌তে ভু‌লে গে‌ছে পার্সটা প‌রে আছে দেখলাম টে‌বি‌লে।

অা‌মি কিছু না ব‌লে চুপ ক‌রে ছাতা নি‌য়ে বে‌ড়ি‌য়ে এলাম।সা‌থে একটা চি‌ঠি দি‌য়ে দি‌লো।‌কি লেখা কে জা‌নে।

‌রিক্সা থে‌কে নাম‌তে নাম‌তে বৃ‌ষ্টি শুরু হল। 
ওর ডিপার্ট‌মেন্ট এর বি‌ল্ডিং এর দি‌কে এগো‌তেই চো‌খে পড়ল একটা মে‌য়ে।
কা‌নে গুঁ‌জে দেয়া কাঠ‌গোলাপ।বাতা‌সে ‌ভেজা ভেজা চুল উড়‌ছে।গাঁঢ় ক‌রে পরা কাজল যেন আকা‌শের কা‌লো মেঘ থে‌কে এনে লা‌গি‌য়ে‌ছে।
আহা কি মায়া!
সাদা সা‌লোয়ার কা‌মিজে ‌দেখ‌ছি যেন কোন পরী বৃ‌ষ্টি‌কে অা‌লিঙ্গন কর‌ছে।
একটু সাম‌নে এগি‌য়ে বললাম ,নীলা?
‌জি,বলুন।
তখন চিন‌তে বা‌কি রইল না
হ্যাঁ এই তো নীলা।
আপনার বাবা আমা‌কে আস‌তে ব‌লে‌ছেন।
নীলার এইদি‌কে কোন খেয়াল নেই।আ‌মি বকবক ক‌রে যা‌চ্ছি ও ওর মত বৃ‌ষ্টি বিলাস কর‌ছে।

বৃ‌ষ্টির জোর বে‌ড়ে‌ছে। 
হঠাৎ ক‌রে নীলা ডাক দি‌য়ে বলল,‌দেখুন তো কিছু পান কিনা অটো বা রিক্সা ।‌
এই ঝুম বৃ‌ষ্টি‌তে যানবাহন পাওয়া খুবই মুশ‌কিল।অ‌নেকক্ষন ধ‌রে খু‌ঁজে একটা রিক্সা নি‌য়ে উঠে পড়লাম।
‌মে‌য়েটাও উঠে পরল,ওর অাশপাশ সম্প‌র্কে কোন খেয়াল নেই।আনম‌নে ডানা মে‌লে যেন উড়‌ছে আকা‌শে।
বললাম ছাতা নিন,‌ভি‌জে যাচ্ছেন।
‌খেয়াল নেই কোন ওর।
এই যে,
এই যে শুন‌ছেন,ছাতাটা নিন। এত ভিজ‌লে জ্বর অাস‌বে তো।অাপনার বাবার টেনশন আপনা‌কে নি‌য়েই যত।‌তি‌নি এম‌নিও তো হা‌র্টের রুগী।আপনার তো কোন খেয়াল নেই সে দি‌কে।

অাপনার বাবা চি‌ঠিটা দি‌য়ে‌ছেন, দেখুন কি লেখা আছে,নিন।
‌কি কর‌ছেন কি?
এই যে কি করছেন এসব!
‌নৌকা বানা‌চ্ছেন যে! 
চি‌ঠিটা পড়বেন তো।
নীলা চি‌ঠি দি‌য়ে নৌকা বা‌নি‌য়ে বৃ‌ষ্টির পা‌নি‌তে ভা‌সি‌য়ে দি‌লো।

চাক‌রির কাজ শেষ ক‌রে অাজ‌কেই চ‌লে যা‌বো।
দুপু‌রের খাবার নীলাই রান্না বান্না কর‌ছে।অা‌মি ওর বাবার সা‌থে বসার ঘ‌রে ব‌সে কথা বল‌ছি আর আঁড় চো‌খে ও‌কে দেখ‌ছি।

বাবা মা মরা মে‌য়ে‌টি ও‌র একটা ব্যবস্থা ক‌রে দি‌তে পার‌লে আমি নি‌শ্চিন্ত।অামি অার কত‌দিনই বা থাকব।

আ‌মি চুপচাপ শুন‌ছি আর নীলার দি‌কে তাকা‌চ্ছি।
‌মে‌য়েটা অবশ্য খারাপ না।অা‌মি যেমনটা ভাব‌ছি সেরকম,‌কিভা‌বে যেন সেই আমার গেইমটা মি‌লে গে‌লো।এই প্রথম আমি জয়ী।
তাহ‌লে গে‌লো।এই প্রথম আমি জয়ী।
তাহ‌লে কি পুরস্কার হি‌সে‌বে নীলা‌কেই পা‌বো!
 নীলা‌কেই চাই‌বো!

মামার অার নীলার বাবার সম্ম‌তি‌তেই আমা‌দের বি‌য়ে হ‌লো। অা‌মি হা বা না সূচক কোন সম্ম‌তি দেই নি। সম্ম‌তি দেই‌নি ব‌লে যে আমার মত ছি‌লোনা তা না। অা‌মি তো ও‌কে প্রথম দেখা‌তেই ভা‌লো‌বে‌সে ফেল‌ছিলাম।
আমা‌দের বি‌য়ের পাঁচ বছর হ‌য়ে গে‌ছে।নীলা‌কে খুব একটা সময় দি‌তে পার‌ছিনা চাই‌লেও ।গতবছর মেলায় যা‌বে মেলায় যা‌বে ক‌রে মাথা খে‌য়ে‌ছে।‌নি‌য়ে যে‌তে পা‌রি‌নি ।
এইবার নি‌জেই পু‌রো ব্যবস্থা ক‌রে রে‌খে‌ছি আগে থে‌কে ।ও‌কে চম‌কে দি‌তে চাই।
আ‌মি ও‌কে চম‌কে দি‌তে পা‌রি‌নি আগে কখনও।‌কিন্তু এখনও আমি চমকা‌তে চাইনা ও‌কে।এত‌দিন ধ‌রে যে সত্য গোপন ক‌রে‌ছি কিভা‌বে ও‌কে বল‌বো তা।‌কোথায় পাব সে শক্তি।
‌কিভা‌বে সামলা‌বো ও‌কে।‌হে খোদা 
‌কিভা‌বে!
 কিভা‌বে!!

কখনও রোদ কখনও মেঘ।
আকাশজু‌ড়ে মে‌ঘে‌দের ভেলা যেন তাড়া আছে খুব তাই‌তো ছু‌টে যা‌চ্ছে কারও ডা‌কে সাড়া দি‌য়ে।আকাশ যেন এক পসরা সা‌জি‌য়ে ব‌সে‌ছে মে‌ঘের।
আ‌মি আগেই নীলা‌কে ফোন দি‌য়ে রে‌ডি থাক‌তে বললাম। এসেই বের হব।‌কি জন্য বের হব ব‌লি‌নি।
এ‌সে দে‌খি সব ঠিকঠাক।কাজ‌লে জড়া‌নো চোখ, যেন চোখ জু‌ড়ে মায়া।আ‌মি সে মায়ার সমু‌দ্রে হা‌রি‌য়ে যাই বারবার।আজও খোঁপায় গু‌ঁজে দি‌য়েছে গুচ্ছ কাঠ‌গোলাপ।আকাশ থে‌কে যেন একটুক‌রো নীল নি‌য়ে জ‌ড়ি‌য়ে নি‌য়ে‌ছে নি‌জে‌কে।আগে কখনও ও‌কে নীল শা‌ড়ি‌তে দে‌খি‌নি আমি।
একটা ছিপ নৌকা আ‌গেই ঠিক করা ছিল।‌নৌকা চল‌ছে পাল তু‌লে দি‌য়ে।নীলা আজ উৎফুল্ল প্রচন্ড রক‌মের।আমার সেই ও‌কে প্রথম সামনাসাম‌নি দেখা দিন‌টির কথা ম‌নে পর‌ছে।
আচ্ছা নীলা কি ভাবছ?
নীলা?
চম‌কে উঠল ও।
আচ্ছা আকাশ আমা‌দের চাঁদ‌সোনা চাঁদবু‌ড়িটা ক‌বে আস‌বে?
তু‌মি তো তারপ‌রে কিছু বল‌লে না,ডাক্তার কি বল‌লো?
আমার খুব একা একা লা‌গে।চুপচাপ কা‌টে।তু‌মি ও সময় পাওনা সময় দেবার।
আ‌মি ওর চো‌খের দি‌কে চে‌য়ে থা‌কি চুপচাপ।একরাশ মেঘ এসে ভ‌রে যায় ওর চো‌খে।ছু‌টে চ‌লে যায় এদিক থে‌কে ও‌দিক।শ্রাবণ মা‌সের মেঘ।শ্রাব‌নের মেঘ।
নীলা মেলা থে‌কে ওর চাঁদ‌ সোনার জন্য কিনল অনেক কিছু।
পুতুল,জামা,জু‌ঁতো,কাজল আরও ।
আ‌মি বাঁধা দেই নি।সবসময় সবাইকে আটকাতে নেই।‌যেমন সবসময় কান্না ধ‌রে রাখা যায় না।‌চো‌খের জল গড়া‌তেই হালকা হ‌তে থা‌কে মন,ধু‌য়ে যায় বিষাদ।

‌মেঘ ক‌রে‌ছে খুব
বা‌ড়ি ফিরব।আমরা নৌকায় চ‌লে এলাম।
ও আজ খু‌শি প্রচন্ড।আজ ও‌কে বল‌তে হ‌বে।আর কত‌দিন লু‌কি‌য়ে রাখা।কত‌দিন আর মি‌থ্যে বাহানা।লুকা‌তে লুকা‌তে পাহাড় জ‌মে গেল যে বু‌কে।এক বুক লুকা‌নো পাহাড় সমান ওজন নি‌য়ে দিন থে‌কে দিন থম‌কে যা‌চ্ছি।অপরাধী হ‌চ্ছি।আজ ও‌কে বল‌তে হ‌বে সব।

‌ঝি‌রি‌ঝি‌রি বৃ‌ষ্টি নাম‌ছে।‌নৌ‌কোর সাম‌নে থে‌কে ছি‌পের ম‌ধ্যে এসে বসল ও।আমার বু‌কে মাথা রে‌খে নদীর জ‌লের দি‌কে তা‌কি‌য়ে আছে। ছলাৎ ছালাৎ বা‌রি দি‌চ্ছে পা‌নি নৌকার নি‌চে।আ‌মি ও‌কে ব‌লি নীলা তু‌মি আর আমিই সারাজীবন থে‌কে যাই।
নীলা চম‌কে উঠে আমার দি‌কে তাকাল।
আ‌মি  নদীর দি‌কে তা‌কি‌য়ে আছি।বললাম তু‌মি মা হ‌তে পারবে না কখনই ডাক্তার বলল।
কাজ‌লে আঁকা ছোট্ট নদীর পাড় উপ‌চে যেন ঢেউ ভে‌ঙে পর‌ছে। কারও সাধ্য নেই এ ঢেউ থামাবার।‌যেন আট‌কে রাখা ব‌নের হ‌রিণ ছাড়া পে‌য়ে মু‌ক্তির স্বাদ নি‌তে ছু‌টে পা‌লি‌য়ে যা‌চ্ছে। নীলা‌কে কিছু বুঝা‌তে পারলাম না,পারলাম না কিছু বল‌তে।
একটা পাষণ্ড আমি আমার বু‌কের ক‌ষ্টের পাহাড় ওর উপর চে‌পে দি‌তে পারলাম কিভা‌বে!

‌কেউ কেউ কল্পনায় সাজা‌তে থা‌কে জগৎ সংসার,‌কেউ কেউ সা‌জায় বাস্ত‌বে তারপর কল্পনা ক‌রে।কা‌রো কল্পনা বা স‌ত্যি হয় কা‌রোটা কল্পনাই থে‌কে যায়।কারও কল্পনার মৃত্যু হয় ভূ‌মিষ্ঠ হওয়ার আগে,কারওটা বা চার দেয়‌লের মা‌ঝে ব‌ন্দি থে‌কে মারা যায়।‌মেল‌তে পা‌রে না ডানা।ডানা মে‌লে উড়‌তে পা‌রে না আকা‌শে।‌উড়ে বেরায় ত‌বে নি‌জের ব‌ন্দি আকা‌শে।
নীলার কল্পনাও কল্পনা থে‌কে যায়।
ওর মা হবার কল্পনা।মা হবার ইচ্ছা।

হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকা‌লো আকা‌শে।
বজ্রপা‌তে নীলা উঠে পরে‌ছে। বিদ্যুত চ‌লে গেল।আ‌মি পুর‌নো ডা‌য়েরীটা বন্ধ ক‌রে ওর কা‌ছে ছু‌টে গেলাম। আবার পাগলা‌মি শুরু করেছে,চাঁদ সোনা কই আমার, চাঁদ সোনা কই।
অ‌স্থির হ‌য়ে পর‌ছে ও।
রাত বাড়‌তে থা‌কে।অন্ধকার বাড়‌তে বাড়‌তে ক্রমশ ঘন হ‌চ্ছে।চার‌দি‌কে নিশ্চুপতা বাড়‌ছে।সব কিছুর ম‌ধ্যেও যেন সব নেই।মা‌ঝে মা‌ঝে জীব‌নে চিৎকার দি‌য়ে নে‌মে আসে বিষাদ।

স্বরূপকাঠি, পিরোজপুর।  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ